ঢাকা শিশু হাসপাতালই যেন ডেঙ্গুর আখড়া!

ঢাকা শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে মশারি ছাড়াই দিন পার করতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। এতে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে পড়ে থাকা আবর্জনার মধ্যে মশার আস্তানা গড়ে উঠলেও তা দমন করা হচ্ছে না। এ কারণে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনদের আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) শ্যামলীতে অবস্থিত ঢাকা শিশু হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের নিচতলায় সাধারণ ওয়ার্ডের পাশে ডেঙ্গু ওয়ার্ড গড়ে তোলা হয়েছে। দুটি রুমে ১৩টি করে ২৬টি বেড। সব বেডে রোগী ভর্তি থাকলেও কোনো রোগীর বেডে মশারি টানানো হয়নি। সাধারণ রোগীদের মতো তাদের দিন পার করতে হচ্ছে। ওয়ার্ডের মধ্যে মশার বিচরণ দেখা গেছে। এসব মশা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের কামড়ে অন্যদের শরীরে পড়ছে।

ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন, রোগীরা দিনে মশারি টানাতে চান না। তাদের বারবার বলে আমরাও বিরক্ত হয়ে আর বাধ্য করি না। এতে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয় বলে জানান তিনি।

ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের কাছে জানতে চাইলে একাধিক রোগীর স্বজন জানান, হাসপাতাল থেকে কাউকে মশারি দেওয়া হলেও দিনের বেলায় টানাতে বলা হয়নি। এ কারণে তারা শুধু রাতে মশারি ব্যবহার করেন, দিনে মশারি ছাড়া থাকেন।

হাঁপানির সমস্যার কারণে দেড় বছরের মাসুমকে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছেন মা বিলকিস আক্তার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালে দিন-রাত মশা কামড়াচ্ছে, তার ওপর পাশের বেডে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। ডেঙ্গু রোগীরা মশারি ছাড়া থাকে, দিন-রাত মশা তাড়িয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। কখন যে আমি ও আমার ছেলে আক্রান্ত হয়ে পড়ি সেই দুশ্চিন্তায় আছি।

তিনি বলেন, সন্তান অসুস্থ হওয়ায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকির মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। নার্সদের বারবার বলার পরও তারা কানে নেন না বলে বাধ্য হয়ে এমন পরিস্থিতি মেনে নিয়ে থাকতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ হাসপাতালের এক নার্স জাগো নিউজকে বলেন, আমরা অসহায়। স্যারদের বারবার বলার পরও তারা এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এতে যে কোনো সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। রোগীরা অভিযোগ দিলেও কিছু করার থাকছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।

অন্যদিকে দেখা গেছে, হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনা ও জমে থাকা ময়লা পানির মধ্যে অসংখ্য মশা আস্তানা গেড়েছে। এসব মশায় হাসপাতাল ভরে গেছে। হাসপাতালের ড্রেনে নোংরা পানি জমে থাকায় তার মধ্যে অসংখ্য মশা জন্ম নিলেও তা দমন করা হচ্ছে না।

আসাদ নামে এক রোগীর অভিভাবক বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসা করতে যে হাসপাতালে এসেছি সেখানে মশার আস্তানা। এসব মশা কামড়ালে ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছে। রোগীর সংখ্যা বাড়াতে হয়তো তারা দেখেও দেখছে না। এ যেন ‘সরষের মধ্যে ভূত’।

তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে এমনিতেই চিকিৎসা ব্যয় বেশি, তার ওপর যদি রোগীর সঙ্গে এসে স্বজনরাও অসুস্থ হয় তাহলে পথে বসা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ হাসপাতালে এ পর্যন্ত মোট ৬৩০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ডেঙ্গু ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন বেডে ৬২ জন ভর্তি রয়েছেন। গত সাতদিনে ৮৪ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে আইসিইউতে রয়েছেন চারজন। এ পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১০ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অধিকাংশ মিরপুরের বাসিন্দা।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. প্রবীর কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীকে মশারি দেওয়া হয়েছে। সেটি সবসময় টানিয়ে তার নিচে থাকতে বলা হলেও অনেকে তা মানছে না। এতে অন্যদের ঝুঁকি বাড়ছে। বারবার বলার পরও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে মশারির কোনো সংকট নেই। অনেক রোগীর অভিভাবক সুস্থ হয়ে চলে যাওয়ার সময় ২০-৩০টি করে মশারি কিনে দিয়েছেন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও চাহিদা মোতাবেক মশারি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রোগীদের কাছে দু-তিনটি করে মশারি থাকলেও তারা তা ব্যবহার করছে না।

তিনি ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকে এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। যারা মশারি ব্যবহারে অনীহা দেখাবে তাদের হাসপাতাল থেকে রিলিজ (ছুটি) দেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

হাসপাতালের চারপাশে ময়লা-আবর্জনা ও মশার আস্তানার বিষয়ে বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে হাসপাতালের রাস্তা ও ড্রেন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সে কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করা হবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924