আজ ১২ জুন, বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস
আজ ১২ জুন, বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও ‘শিশুর শিক্ষা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করি, শিশুশ্রম বন্ধ করি’- এ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিনটি সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী শিশু ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে।
২০০২ সালে সর্বপ্রথম দিবসটি পালন করে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও)। আইএলও মনে করে, শিশু শ্রমের শিকার হওয়া শিশুদের দুর্দশার কথা তুলে ধরার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। আইএলও কনভেনশন নম্বর ১৮২, যা শিশু শ্রমের সবচেয়ে খারাপ রূপের সঙ্গে এবং আইএলও কনভেনশন নম্বর ১৩৮, যেটি কর্মসংস্থানের জন্য ন্যূনতম বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত– এই দুই প্রধান ইস্যু নিয়ে কাজ করে।
জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শ্রম আইন-২০০৬ (২০০৬ সালের ৪২ নম্বর আইন)-এ শিশু ও কিশোরের সংজ্ঞা ও তৃতীয় অধ্যায়ের ধারা ৩৪ থেকে ৪৪-এ কিশোর এবং শিশু নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় উল্লেখ করা আছে। এ আইনে আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে যেকোনও শিশুর নিয়োগ রহিত করা হয়েছে। শিশু শ্রমের কারণে শিশুদের দুর্দশার কথা তুলে ধরাই ছিল এর উদ্দেশ্য। প্রতি বছর ১২ জুন শ্রম এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউনিসেফ, ওয়ার্ল্ড ভিশন, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এবং এডুকো- বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়। জাতিসংঘভুক্ত সব দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইউনিসেফ বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘের এই সংস্থা গত ৭ ফেব্রুয়ারি এক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে জানায়, বাংলাদেশে এখন ১৮ লাখ শিশু জড়িত শ্রমে। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের ৬ দশমিক ৮ শতাংশ শিশুশ্রমে নিয়োজিত।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুসহ সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ এবং ২০ অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। মৌলিক অধিকার অংশের অনুচ্ছেদ ২৭, ২৮, ২৯, ৩১, ৩৪, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ এবং ৪১-এ মানুষ হিসেবে সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। বিশেষত জবরদস্তিমূলক শ্রম পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে আইনগতভাবে প্রতিকার পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর এ দেশে শিশু এবং শিশু অধিকার সংরক্ষণে প্রবর্তিত হয় শিশু আইন ১৯৭৪ (১৯৭৪ সালের ৩৯ নং আইন)। এ আইনের শিরোনাম থেকে বোঝা যায়, এ আইনে মূলত শিশুদের প্রাধান্য দিয়ে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ আইনে শিশুর সংজ্ঞা, শিশুর বয়স, তার অধিকারের পরিধি, নাবালকত্ব, অভিভাবকত্ব, শিশুর সম্পদের হেফাজত, দেওয়ানি-ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে শিশুর রক্ষাকবচ ইত্যাদি বিষয় বিস্তৃত পরিমণ্ডলে আলোচিত হয়েছে। শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ আইন একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক বলেও জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিতে বলা হয়েছে।
জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক দুরবস্থাও শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ। গ্রামে কাজের অপ্রতুল সুযোগ, সামাজিক অনিশ্চয়তা, মৌলিক চাহিদা পূরণের অভাব ইত্যাদি কারণে গ্রাম থেকে মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। নদীভাঙন, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। এ জাতীয় প্রতিটি ঘটনা-দুর্ঘটনাই শিশুদের কায়িক শ্রমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাবা-মায়ের স্বল্প শিক্ষা, দারিদ্র্য এবং অসচেতনতার কারণে তারা শিক্ষাকে একটি অলাভজনক কর্মকাণ্ড মনে করে। সন্তানদের ১০/১৫ বছর ধরে শিক্ষা উপকরণ ও সুযোগের অভাব এবং শিশুশ্রমের কুফল সম্পর্কে অভিভাবকদের অসচেতনতা বা উদাসীনতায় দেশে শিশুশ্রম বাড়ছে।
– আ স ম রুম্মাণ (নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি, ঢাকা)