কোন বন্ধুর সঙ্গে মিশছে আপনার শিশু?
শিশুর সামাজিকীকরণে বন্ধু খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন ভালো বন্ধুর প্রভাবে শিশু বেড়ে ওঠে নির্মলভাবে। অপর দিকে একজন খারাপ বন্ধুর সান্নিধ্যে চারিত্রিক স্খলন হতে পারে। দিনের তিন ভাগের দুই ভাগ সময় শিশু পরিবারের বাইরে অতিবাহিত করে।
সুতরাং একজন বন্ধুর গুরুত্ব কতটুকু, তা উপলব্ধি করতে পারা যায়। একটি চারা গাছ বেড়ে উঠতে যেমন আলো, বাতাস ও পানি পরিমাণমতো প্রয়োজন, তেমনি একটি শিশুর বেড়ে উঠতে পরিবার, বিদ্যালয়, সঙ্গীর অবদান রয়েছে। গাছের উপাদানগুলোর যেকোনো একটি যদি অনিয়মিত হয়, তাহলে কি গাছ ঠিকভাবে বেড়ে উঠবে? নিশ্চয়ই না।
অপর দিকে শিশুর বেড়ে ওঠায় তার চারপাশের পরিবেশের যেকোনো একটি উপাদান যদি প্রতিকূল হয়, তাহলে শিশুর বেড়ে ওঠায় ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের মতে, ‘একটি বই এক শটি বন্ধুর সমান; কিন্তু একজন ভালো বন্ধু পুরো একটি লাইব্রেরির সমান।’
সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টিকারী শব্দ কিশোর গ্যাং। হাতে খাতা-কলমের বদলে থাকে ছুরি, চাকু। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা যায়, ঢাকায় ৩৪টি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। কিশোর গ্যাং আপনা-আপনি কিংবা হঠাৎ তৈরি হয় না। সন্তান পরিবারের বাইরে কার সঙ্গে সময় অতিবাহিত করছে, তা খেয়াল রাখলে হয়তো কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার সুযোগ পাবে না। এই কিশোর গ্যাংয়ের প্রত্যেক সদস্য আপনার, আমার মতো পরিবারের সন্তান, যারা অসৎসঙ্গের পাল্লায় পড়ে তৈরি হয়। মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে উঠে আসে মা-বাবা সন্তানের হাতে খুন; অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে দিতে না পারায় কিশোরের আত্মহত্যা; কিংবা এক বন্ধুর ছুরিকাঘাতে অন্য বন্ধু খুন। এসব হৃদয়বিদারক ঘটনা আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে, কিন্তু আমরা কি কখনো ভাবি, এসব কেন ঘটছে? এসব হচ্ছে খারাপ সঙ্গীর বিষফল।
ছেলেমেয়েকে খারাপ সঙ্গীর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে দরকার পারিবারিক সচেতনতা। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করা, পরিবারের বাইরে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম তদারকি এবং ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হলে স্বভাবতই তারা খুঁজে নেবে ভিন্ন সঙ্গ। আর সেই সঙ্গ যদি হয় অসৎ, তাহলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।
প্রতিদিন আপনার শিশু পরিবারের বাইরে কার সঙ্গে এবং কতটুকু সময় অতিবাহিত করছে, তা খোঁজ রাখা জরুরি। একটা গাছ রোপণের পর যেমন পরিচর্যা ছাড়া ঠিকভাবে বেড়ে ওঠে না, তেমনি শুধু টাকাপয়সা দিয়ে সন্তান মানুষ হয় না। দরকার পরিমিত পরিচর্যা। ঠিকমতো খোঁজখবর না রাখতে পারলে কুপথে চলে যাবে। ছিদ্র বালতিতে অনবরত পানি ঢালার মতোই যত পানি ঢালবেন, বালতি কখনো পূর্ণ হবে না।
আজকের শিশু-কিশোরেরা ভবিষ্যতের কর্ণধার। তারা যদি বিপথগামী হয়, তাহলে আগামী প্রজন্মের থেকে ভালো কিছু আশা করাও মরীচিকা। বরং তারা বেড়ে উঠুক শুভ্র মেঘের মতো নির্মলতায়।
-
বীথি হোসাইন শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।