কী করে বুঝবেন স্কুলে শিশু বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে?

সারা দিন শিশুর কেমন কাটল, গল্পচ্ছলে অভিভাবককেই তা জানতে হবে। তাহলে বাইরে নেতিবাচক কিছু ঘটছে কি না, জানতে পারবেন।

পড়ালেখা, খেলাধুলা, হাসি-গল্পে কাটবে স্কুলের রঙিন সময়। সব বাবা–মায়ের এমনটাই প্রত্যাশা থাকে। তবে প্রত্যাশামতো সব কি আর হয়। দেখা যায় সকালে হাসতে হাসতে স্কুলে গেল সন্তান। দুপুরে ফিরল মুখ কালো করে। রাতে ঘোষণা দিল পরদিন স্কুল যাবে না। সহপাঠীদের অপ্রত্যাশিত আচরণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে আপনার শিশু। তার দেহের গড়ন কিংবা স্বভাব নিয়ে হাসাহাসি করতে পারে অন্যরা, তাকে শারীরিকভাবে আঘাতও করতে পারে। অন্যদের এসব নেতিবাচক আচরণকে বলা হয় ‘বুলিং’।

অভিভাবকের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকলে এসব পরিস্থিতিতে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা তাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সাহস পায় না শিশু। বাইরে থেকে আঘাত পেয়ে এসে বাসায় সেটা বলতে গিয়ে না আবার ধমক খায়—এই ভয়ও তার মধ্যে কাজ করে। সারা দিন শিশুর কেমন কাটল, গল্পচ্ছলে অভিভাবককেই তা জানতে হবে। তাহলে বাইরে নেতিবাচক কিছু ঘটছে কি না, জানতে পারবেন। অভিভাবকদের জন্য এমন নানা পরামর্শ দিলেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রশিদুল হক।

শিশুর মধ্যে হঠাৎ পরিবর্তন

স্কুলে শারীরিক কিংবা মানসিক উৎপীড়নের কারণে শিশু স্কুল এবং পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারাতে পারে। অমনোযোগী হয়ে পড়তে পারে। তার স্কুলভীতি জন্মাতে পারে। স্কুলে যাওয়ার সময় হলেই না যাওয়ার জন্য নানা অজুহাত তৈরি করবে। অন্যদের সঙ্গে খেলতেও অনীহা প্রকাশ করবে। স্বাভাবিক উচ্ছলতাও হারিয়ে যেতে পারে। মেজাজ হয়ে যেতে পারে তিরিক্ষি। কেউ আবার অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে, খাবার রুচি কমে যায়, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। শিশু চুপচাপ হয়ে যেতে পারে; একা থাকতে পছন্দ করবে; দুশ্চিন্তা, অশান্তি কিংবা হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারে। এই বিষয়গুলো অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। নিজের ক্ষতিও করতে চাইতে পারে। এমনকি আত্মহত্যার ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।

খোঁজ রাখুন নিয়মিত

স্কুলে সারা দিন কী হলো, শিশু কী করল, তার বন্ধুরা কী করল, শিক্ষক কী করলেন—এসব বিষয় ঘরোয়া পরিবেশে গল্পে গল্পে জেনে নিন রোজ। সহজভাবে শিশুর সঙ্গে মিশে যান। যা-ই ঘটুক, শিশুকে সত্য বলার সাহস জোগান। এমনকি সে নিজেও যদি কারও সঙ্গে মারামারি করে আসে, তা–ও যেন বলতে পারে নির্দ্বিধায়। কোন কাজটা ঠিক, কোনটা ভুল, সেটা নিশ্চয়ই শেখাবেন। কিন্তু এমনভাবে শাসন করবেন না, যাতে আপনাকে তথ্য জানাতে সে ভয় পায়।

করণীয়

শিশুর মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করলে তার সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন। মা-বাবা ছাড়াও পরিবারের অন্য সদস্য, যার সঙ্গে সে মন খুলে কথা বলে, এমন ব্যক্তি গল্পচ্ছলে জেনে নিতে পারেন তার সমস্যার কথা। স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গেও কথা বলুন। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের সহায়তা নিন, যাতে অন্য শিশুর সঙ্গেও এমন না ঘটে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কাউন্সেলিং এবং ওষুধও প্রয়োজন হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924