‘অটিজমে আক্রান্ত ৯% শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার’

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৫ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা অটিজমে আক্রান্ত শিশুর আট দশমিক ৯ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তিন থেকে ৯ বছর বয়সী এইসব শিশুদের মায়ের সাক্ষাৎকার শেষে এমন তথ্য জানা গেছে বলে জানানো হয়েছে এক গবেষণায়।

গবেষণাটি পরিচালনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বিএসএমএমইউ’র বি-ব্লক শহীদ ডা. শহীদ মিলন হলে এই গবেষণার ফলাফল জানানো হয়। বিশ্ব শিশু দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভাগটির বিগত পাঁচ বছরের শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

এদিন শিশু অধিকার এবং সুরক্ষা বিষয়ে গবেষণা উপস্থাপন করেন ডা. মারিয়াম সাল।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরের টারশিয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অটিজমে আক্রান্ত ৪৫ জন শিশুর মায়েদের সাক্ষাৎকার নিয়ে দেখা যায়, ৩ থেকে ৯ বছর শিশুর প্রত্যেকেই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মাঝে ৮.৯ শতাংশই কোনো না কোনো সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের গ্রামীণ এলাকায় ১ হাজার ৪১৬ জন ১১-১৭ বছর বয়সী শিশুর উপর পরিচালিত আরেক গবেষণায় দেখা যায়, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে বাড়িতে, স্কুলে এবং কর্মক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ শারীরিক নির্যাতন, ১৭ শতাংশ মানসিক নির্যাতন এবং ৭৮ শতাংশ শিশু অবহেলার শিকার হয়েছে।

গবেষক বলেন, গবেষণায় আরও দেখা যায় কর্মজীবী শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু এবং বস্তি এলাকায় বসবাসকারী শিশুরা অত্যাচারের সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে।

সিরাজগঞ্জ জেলার চারটি বাজারের পরিস্থিতি উল্লেখ করে গবেষক জানান, ৩৯৮ জন কর্মজীবী শিশুর উপর আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, শারীরিক নির্যাতনের শিকার শিশুদের মাঝে শতভাগ মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। এ ছাড়াও অবহেলার শিকার হয় ৮২.৭ শতাংশ। অনুষ্ঠানে শিশু নির্যাতন বন্ধে মিডিয়ার ভূমিকা বিষয়ক গবেষণা উপস্থাপন করেন ডা. শাবনাম আযীম।

তিনি জানান, শিশু নির্যাতনের ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো প্রায়ই শিশু যৌন নির্যাতনের মারাত্মক ঘটনাগুলো এমনভাবে প্রকাশ করে যা নৈতিকতা বিবর্জিত। প্রিন্ট মিডিয়া বিষয়ভিত্তিক প্রতিবেদনের চেয়ে এপিসোডিক প্রতিবেদন বেশি প্রকাশ করে শিশুর বিকাশ, সুরক্ষা এবং সুস্থতার সামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করার সুযোগটি হাতছাড়া করছে।

গবেষণা ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বজুড়ে শিশু নির্যাতন একটি উদ্বেগজনক ঘটনা এবং শিশু বিকাশের জন্য একটি বড় বাধা হিসাবে স্বীকৃত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শিশু নির্যাতন বলতে সব ধরনের শারীরিক এবং অথবা মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, অবহেলা, বাণিজ্যিক বা অন্যান্য নির্যাতনকে বোঝায় যার ফলে দায়িত্ববোধ, বিশ্বাস বা আত্মমর্যাদার প্রেক্ষাপটে শিশুর স্বাস্থ্য, বেঁচে থাকা এবং বিকাশের ক্ষতি হয়। বাংলাদেশে শিশু নির্যাতনের কোনো স্বীকৃত সংজ্ঞা নেই। যদিও, বাংলাদেশি আইনি ব্যবস্থায় শিশুদের উপর করা প্রায় প্রতিটি নির্যাতনের শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মানদণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

তারা জানান, জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকার রক্ষার জন্য, ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ গ্রহণ করে এবং ১৯৫টি দেশ সনদটি অনুমোদন করে। সনদ এর ১৯ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে, প্রতিটি জাতি সকল ধরনের অত্যাচারের হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করতে বাধ্য থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924