শিশুর খতনা করার আগে-পরে

একমাত্র সন্তান রাকিনকে নিয়ে ঢাকার মালিবাগে থাকেন একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা রুকাইয়া রহমান। সন্তানের বয়স তিন পেরিয়ে চারে পড়েছে এ বছর। ভেবেছিলেন নতুন বছরে ছেলের খতনা করাবেন। কিন্তু খতনা করার পর শিশু আয়ানের মৃত্যু নিয়ে এখন ভয় ঢুকে গেছে তাঁর মনে।

বললেন, নামি হাসপাতালেও যখন আমাদের সন্তানরা নিরাপদ নয় তখন আমরা যাব কোথায়। গ্রাম থেকে রাকিনের দাদা ফোন করেছেন। বাড়িতে নিয়ে গ্রামের হাজাম দিয়ে খতনা করাতে চান নাতির। কিন্তু তাতেও সায় দিচ্ছেন না এই শিক্ষিকা।

তাঁর মতো এমন আশঙ্কা এখন অনেক অভিভাবকেরই। তবে খতনা করার আগে ও পরে কিছু বিষয়ে সতর্কতা মেনে চললে এই প্রক্রিয়া শতভাগ নিরাপদ বলেই মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

কখন খতনা করাবেন

সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সকেই খতনা করানোর জন্য আদর্শ সময় বলে মনে করেন চিকিত্সকরা। তবে অন্য কোনো সমস্যা থাকলে কখনো কখনো এর আগেও খতনা করার প্রয়োজন হতে পারে।

এ জন্য শিশুর বয়স তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনো সময় খতনা করাতে পারেন। শিশুর খতনা করানোর আগে দূরে কোথাও ভ্রমণ, শিশুর স্কুলের ছুটি, পারিবারিক উত্সব যেমন বিয়ে এসব বিষয় মাথায় রাখা ভালো।

শিশুকে মোটিভেট করুন

খতনা নিয়ে শিশুদের মনে অনেক ভয় কাজ করে। এটা খুবই স্বাভাবিক। এই ভয় দূর করতে হবে মা-বাবাকেই।

এ জন্য শিশুকে অভয় দিন। গল্প শোনান। আগে থেকেই শিশুকে তৈরি করুন। যেন খতনা নিয়ে অহেতুক কোনো ভয় শিশুমনে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে।

চিকিত্সকের সঙ্গে কথা বলুন

মন চাইল আর শিশুকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে দিলেন। এমনটা করা যাবে না। শিশুকে নিয়ে আগে চিকিত্সকের সঙ্গে দেখা করুন। এতে চিকিত্সকের সঙ্গে শিশুর পূর্ব পরিচয় ঘটবে। চিকিত্সকও খতনা-পূর্ব কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিত্সা বা পরামর্শ দিতে পারবেন। আপনাদেরও একটি আস্থার জায়গা তৈরি হবে।

চিকিত্সককে সহায়তা দিন

শিশুরা অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে ভয় পেতে পারে এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য শুরুতেই শিশুকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় না। শিশুকে আগে তৈরি করা হয়। তার সঙ্গে চিকিত্সকের কথা বলা, অজ্ঞান করা বা ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এ জন্য শিশুকে ওটিতে নেওয়ার আগ পর্যন্ত নিজেও অ্যাপ্রোন পরে অপারেশন দলের সদস্য হয়ে যান। শিশুকে বলুন আপনিও ডাক্তারের সঙ্গে থাকবেন। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে বের হয়ে আসুন।

অপারেশন-পরবর্তী

আধুনিক অপারেশন পদ্ধদিতে খতনা-পরবর্তী কোনো জটিলতাই সাধারণত হয় না। খতনা করার কিছুক্ষণ পর থেকেই শিশুরা স্বাভাবিক চলাফেরা, খেলাধুলা করতে পারে। নেই কোনো খাবারদাবারের নিষেধাজ্ঞাও। সব কিছু খেতে পারবে খতনা করার পর। তবে শিশু যেন আঘাত না পায় সেদিকে কয়েক দিন সতর্ক থাকা জরুরি।

হাজাম বা হাতুড়ে ডাক্তার নয়

এখনো গ্রামে হাজাম বা হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে খতনা করার প্রচলনই বেশি। তবে এই রেওয়াজ থেকে আমাদের বের হয়ে আসা উচিত। কেননা খতনা-পরবর্তী কোনো জটিলতা তৈরি হলে তা মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা সুবিধা তাদের থাকে না। এখনো তাদের কেউ কেউ সনাতন বা পুরনো পদ্ধতিতেই খতনা করান। এতে শিশুদের অনেক অসুবিধা পোহাতে হয়। এ জন্য একজন দক্ষ সাজার্রি চিকিত্সকের কাছে শিশুর খতনা করানো বেশি নিরাপদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924