গাজার হাসপাতালে ইসরাইলী হামালায় নিহতের অধিকাংশ শিশু

দখলদার বাহিনীর টানা বোমা বর্ষণের কারণে অবরুদ্ধ গাজা ইতোমধ্যে মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে এত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে যে কান্নার মানুষটাও নেই। কোনো পরিবারের সবাই নিহত হয়েছেন বোমার আঘাতে। আবার কারো কারো পরিবারের সন্ধানও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনি এক বিভিশিখাময় পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে বোমা ফেলা হয়। আর এতে সেখানে আশ্রয় নেয়া শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের অধিকাংশই শিশু।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় নির্বিচারে হামলা করছে ইসরায়েল। গত ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের হামলার জবাবে এসব হামলা চালাচ্ছে তারা। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি হাসপাতাল, জাতিসংঘের স্কুল এমনকি জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার গুদামও। গাজায় নিহতের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই শিশু।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৩২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১১ হাজারের বেশি মানুষ। নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশই শিশু। খবর এপি ও আল জাজিরার।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় নিহতদের মধ্যে এক হাজারের বেশি শিশু রয়েছে। এছাড়া বাকিদের বেশিরভাগই নারী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, মঙ্গলবার গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত আল আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলায় ৫ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তি। আল আহলি থেকে কয়েকশ আহত ব্যক্তিকে গাজার প্রধান হাসপাতাল আল শিফাতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের বেশিরভাগের অবস্থা গুরুতর।

এপির খবরে বলা হয়েছে, আগে থেকেই আল শিফা হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ রয়েছে। সেখানে সামান্য জায়গাও অবশিষ্ট নেই।

আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সেলমিয়া বলেন, আহতদের হাসপাতালের মেঝেতে রাখা হয়েছে। রক্তাক্ত মেঝেতে তাদেরকে শুইয়ে দেয়া হয়। এ সময় তাদের চিৎকারে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

আবু সেলমিয়া বলেন, ‘আমাদের যন্ত্রপাতি দরকার, ওষুধ দরকার, বিছানা দরকার, অ্যানেস্থেশিয়া দরকার, আমাদের সবকিছু দরকার। হাসপাতালের জেনারেটরের জ্বালানী কয়েক ঘন্টার মধ্যে ফুরিয়ে যাবে।’

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর নিচে ১২০০ এর বেশি মানুষ চাপা পড়ে আছে। তাদেরকে মৃত বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে যে তারা হামাসের আস্তানা, অবকাঠামো এবং কমান্ড সেন্টারকে লক্ষ্যবস্তু করছে। গাজার হাসপাতালে হামলার কথা অস্বীকার করেছে তারা। ইসরায়েলের দাবি, গাজা থেকে ছোড়া রকেট নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে হাসপাতালে আঘাত হেনেছে। তবে তাদের এই দাবির সত্যতা মেলেনি। বরং হাসপাতালে হামলার পর এক কর্মকর্তা সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে সত্যতা নিশ্চিত করেন। পরে তিনি সেটি ডিলিট করে দেন।

ইসরায়েল শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করছে। জাতিসংঘের স্কুল, হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র এমনকি জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার গুদামেও বোমা ফেলেছে ইসরায়েল। এসব তথ্য জানিয়েছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা, রেডক্রসসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা।

এদিকে ইসরায়েল শুরুতে দাবি করেছিল যে, হামাস হামলা চালিয়ে ৪০ শিশুকে হত্যা করেছে। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা। এ বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। তবে পরবর্তীতে হোয়াইট হাউস জানায় যে, এ বিষয়ে খুব বেশি তথ্য তাদের কাছে নেই। পরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীও জানায় যে, ৪০ শিশু নিহতের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়ে শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যার ঘটনায় তিনি ‘হতভম্ব’।

মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) দেওয়া পোস্টে আন্তোনিও গুতেরেস এই নিন্দা জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে সব হাসপাতাল ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।

গাজায় হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবাধিকবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924