৯ ঘণ্টা আটকা ফেরি, অ্যাম্বুলেন্সেই মারা গেল শিশু
ঘন কুয়াশার কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট গত কয়েক দিন ধরে নিয়মিত দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকছে। এতে করে ঘাট এলাকায় শতশত যানবাহন আটকে সৃষ্টি হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি।
সকাল ৯টার দিকে দৌলতদিয়ার ৭নং ঘাটে মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে। শিশুটি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মাজমারি গ্রামের নাজিমুল ইসলাম ও তানজিনা খাতুন দম্পতির একমাত্র সন্তান।
শিশুটির মা তানজিনা খাতুন আহাজারি করে বলেন, ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর গাফিলতির কারণে আজ আমার কলিজার টুকরো শিশুটি মারা গেল। তারা ইচ্ছা করলে আমাদের নিয়ে ওপারে যেতে পারত। কিন্তু অনেক অনুরোধ করার পরও তারা ফেরি ছাড়েনি।
শিশুটির বাবা নাজিমুল ইসলাম বলেন, আমার শিশুটি কয়েক দিন ধরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় ছাড়পত্র দিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে রেফার্ড করে। আমি অ্যাম্বুলেন্স করে রাত ১২টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে আসার পর দেখি ফেরি চলাচল বন্ধ। সারা রাত ৭নং ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে বাচ্চা নিয়ে বসে থাকি। ভোরের দিকে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ায় আমার শিশুটি আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সেই সঙ্গে আমার আর তানজিনার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ফেরিঘাটে আটকে থেকে শিশু মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বহু জরুরি রোগী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। কিন্তু এই শীত মৌসুমে দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকাতে এই সব রোগীদের যথাসময়ে গন্তব্যে নেয়া যাচ্ছে না। ফলে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সেই সঙ্গে শত শত যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে মানুষের সীমাহীন ভোগান্তি ও অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধিত হচ্ছে। আমি এ সমস্যার সমাধানে এ রুটে জরুরি ভিত্তিতে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুল হক বলেন, ফেরিতে উন্নতমানের ফগলাইট সংযোজন করার মাধ্যমে জরুরি সার্ভিস চালু রাখার বিষয়ে তিনি শিগগিরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পত্র দেবেন।
রাজবাড়ী-১ আসনের সাংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বলেন, কুয়াশার মধ্যে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স চালানো সম্ভব কিনা এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।