১৫ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে আলাদা হলো ২ শিশুর জোড়া মেরুদণ্ড
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টার জটিল অপারেশনের পর আলাদা হলো কুড়িগ্রামের মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো শিশু নুহা ও নাভা। সোমবার ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দীর্ঘক্ষণ এই অপারেশন চলে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই দুই শিশু এখন ভালো আছে; তাদের রাখা হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে ৩৯ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১০০ জনের দল এই অস্ত্রোপচারে অংশ নেয়। মঙ্গলবার ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিশু দুটির সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রী নিজেও ওই চিকিৎসক দলের সদস্য ছিলেন। শিশু দুটির সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নাভা ও নুহা এখন দুজনেই পৃথক। তারা ভালো আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু নুহা ও নাভার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের চিকিৎসার সব খরচ প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বহন করছেন। তিনি নুহা ও নাভার সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি আজ তাদের (শিশুদের) দেখলাম। আমার কাছে খুব ভালো লাগল। বাচ্চা দুটি পুরোপুরি আলাদা হয়েছে এবং তারা ভালো আছে। আমার মনে হচ্ছে এটা একটা যুগান্তকারী কাজ।”
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার কাঁঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও তার স্ত্রী নাসরিনের গর্ভে মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো কন্যা সন্তান নুহা ও নাভা গত ২০২২ সালের ২১ মার্চ জন্ম নেয়। জন্মের অল্প কয়েকদিন পর এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো স্পাইন সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে নুহা ও নাভাকে ভর্তি করা হয়। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তাদের প্রথম ধাপের সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) তাদের এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। চিকিৎসকরা জানান, এ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নুহা ও নাভার দেহে টিস্যু বর্ধনকারী ডিভাইস ৪টি এক্সপান্ডা সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বনিকসহ আরও ১০ জন চিকিৎসক এ অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণ করেন।