হাসপাতালগুলোতে শিশু ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে
শিশু হাসপাতালে ৪ আগস্ট সর্বাধিক ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এখানে করোনার পরই ডেঙ্গু রোগীর জন্য বিশেষ ইউনিট চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের হিসাবে এখানে আট জন ডেঙ্গু রোগী গুরুতর অবস্থায় আইসিইউতে চিকিত্সাধীন আছে। জুন-জুলাই মাসে এখানে ১০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের মতে ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে দেখা দেয়।
এবছরও ঠিক তেমন করেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা। করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু যোগ হয়ে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর তালিকাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই জ্বর হলেই অপেক্ষা না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা এবং সময়মতো সঠিক চিকিত্সার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
জাতীয় দলের ফুটবলার মোস্তাফা আনোয়ার পারভেজ। পারভেজ বাবু নামে পরিচিত তিনি। তার দুই ছেলেরই ডেঙ্গু হয়। বড় ছেলে রাহিল ২২ জুলাই আক্রান্ত হয়। ২৭ জুলাই রাহিলের জন্মদিন ছিল। ঐদিন ছেলের ৭ বছর পূর্ণ হয়। চিকিত্সাধীন অবস্থায় ২৮ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যায় ছেলে রাহিল। ছেলেকে কবর দিয়ে বাবা-মা ছোটেন ছোট ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে। কারণ তারও ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। নগরীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৫ আগস্ট কথা হয় পারভেজ বাবু ও তার স্ত্রীর সঙ্গে। তারা জানান, প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হলে তারা চিকিত্সকের পরামর্শের অপেক্ষা না করে ছেলের ডেঙ্গু টেস্ট করেন। আর পজিটিভ হলে এখানে নিয়ে আসেন। এ বিষয় আর কোনো কথা বলতে চান না তারা। শুধু বলেন, শিশুর জ্বর হালকাভাবে নেবেন না।
হাসপাতালের তথ্য মতে, গত ৫ আগস্ট হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৭ জন রোগীর মধ্যে ১৫ জনই ডেঙ্গু রোগী ছিল। তাদের একজন ১০ মাসের আরহামের মা সোনিয়া জানান, প্রচণ্ড জ্বর হলে তাকে এখানে নিয়ে আসেন। তার প্লাটিলেট কমে যায়, অবস্থা এখন একটু ভালো।
শিশু বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিত্সক সহকারী অধ্যাপক ডা. সুমালা আশ্রাফ ইত্তেফাককে বলেন, এক বছর আগে ডেঙ্গুর ঠিক এমন প্রাদুর্ভাব ছিল। প্রতিদিনই তাদের হাসপাতালে তিন থেকে চার জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। এখন তাদের শিশু বিভাগে ৮০ শতাংশই ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গুর সঙ্গে কোভিড-১৯ হলে অবস্থা আরো খারাপ হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, অনেক সময় ডেঙ্গু রোগী গুরুতর অবস্থায় গেলে তাকে অন্যত্র পাঠাতে হয়। কারণ তাদের শিশুরোগীদের জন্য কোনো আইসিইউ নেই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কেবল শিশুদের ডেঙ্গুর সঙ্গে করোনা হলেই চিকিত্সা করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক ইত্তেফাককে বলেন, ডেঙ্গু ও করোনা-উভয় রোগই হয়েছে, এমন রোগীর সংখ্যা কম হলেও আছে।
শিশু হাসপাতালে ৪ আগস্ট সর্বাধিক ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এখানে করোনার পরই ডেঙ্গু রোগীর জন্য বিশেষ ইউনিট চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের হিসাব মতে এখানে আট জন ডেঙ্গু রোগী গুরুতর অবস্থায় আইসিইউতে চিকিত্সাধীন আছে। জুন-জুলাই মাসে এখানে ১০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে এখানে ১৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিত্সাধীন আছে।
শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ বলেন, জুন-জুলাই মাসে শিশু হাসপাতালে চার জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। শিশুর জ্বর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে না কমলে অবশ্যই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গু হলে শিশুর বমি, কালো পায়খানা এবং রক্তক্ষরণ হয়। প্লাটিলেট কমে গেলে অবস্থা গুরুতর হয়। তিনি মশা নিধন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বাড়িতে মশারি ব্যবহার করার এবং শিশুদের ফুল প্যান্ট ও ফুল হাতার জামা পরানোর পরামর্শ দেন।