স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছিল শিশু আয়ানের

সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়ান ‌চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য আয়ানকে মাঝে মাঝে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া লাগতো। সুন্নতে খৎনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।

প্রতিবেদনের মতামত অংশে আরও বলা হয়, শিশু আয়ানের অপারেশনের সময় স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টে দাখিল করা ১৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে উপ-পরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

চার দফা সুপারিশ
সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মতো আর কারও যেন মৃত্যু না হয় এজন্য চার দফা সুপারিশ করেছে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। সুপারিশগুলো হলো–

• হাসপাতালে একাধিক এনেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া।
• রোগী ও রোগীর আত্মীয় স্বজনকে এনেসথেসিয়া ও অপারেশনের ঝুঁকিসমূহ ভালোভাবে অবহিত করা।
• হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা রাখা।
• সরকারের অনুমোদনের পরে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা।

রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনটি দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।

আদালত প্রতিবেদনটি অ্যাফিডেভিট আকারে দাখিলের নির্দেশ দেন এবং শুনানির জন্য আগামীকাল সোমবার দিন ধার্য করেন।

গত ২২ জানুয়ারি শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন ২৫ জানুয়ারি দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

সেদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

গত ১৫ জানুয়ারি শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি দেশের সব সরকার অনুমোদিত ও অন অনুমোদিত হাসপাতাল ক্লিনিকের তালিকা ১ মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

এর এক দিন আগে ১৪ জানুয়ারি ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিটের শুনানি শেষ হয়। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।

গত ৯ জানুয়ারি শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে শিশু আয়ানের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের ডাক্তারি সনদ বাতিল ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। পরে শিশু আয়ানের বাবা রিটে পক্ষভুক্ত হন। নতুন করে রিটে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

এদিকে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত ৮ জানুয়ারি রাজধানীর সাতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নাতে খৎনা করাতে গিয়ে টানা ৭ দিন লাইফ সাপোর্টে থেকে শিশু আয়ান মারা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *