সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা করোনা ভাইরাসের বাহক হবার ঝুঁকিতে
১৫ বছরের মামুন কিশোর (ছদ্মনাম) খাবারের খোঁজে রাজধানীর পথে পথে ঘুরে। কাগজ, ময়লা কুড়িয়ে অন্যান্য সময় কিছু আয় থাকলেও করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি ছুটির কারণে সেটাও বন্ধ। তাই খাবারের জন্য তাকে অনেক জায়গায় ঘুরতে হয়। কোথাও যদি একটু সাহায্য মেলে। সাহায্য বা ত্রাণের জন্য জনসমাগম স্থলেও যেতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা বিষয়ে তার জানা আছে নাকি জানতে চাইলে সে ‘না বলে’।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা আড়াই থেকে চার লাখ। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, পথে তাদের অবস্থান হওয়ায় এবং সংঘবদ্ধ চলাফেরা ও রাতযাপনের কারণে করোনাভাইরাসের বাহক হিসেবে খুব ঝুঁকিতে আছে তারা। তাদের থাকার জায়গা না থাকলেও এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ বলেন, ‘তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের হার কম। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিশুরা এই ভাইরাসের বাহক হিসেবে ঝুঁকির মধ্যে আছে। পথশিশুরা কিন্তু দলবদ্ধভাবে বসবাস করে, ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে রাতের বেলা একসঙ্গে থাকে। পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও আছে।’
তারা আরও বলেন, ‘সবাইকে ঘরে নিরাপদে থাকতে বলছি, কিন্তু যাদের ঘর নেই তারা কী করবে। সরকারের বিশাল বাজেটের পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম আছে। আমরা মনে করি সেটাতে এই মুহূর্তে আলাদাভাবে জোর দিয়ে অন্তত মেগা সিটিগুলোতে যে শিশুরা আছে তাদের জন্য করোনায় বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।। এখন স্কুল-কলেজ বন্ধ, অস্থায়ীভাবে সেগুলোকে ব্যবহার করা যাচ্ছে না? এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা নির্বাচনের সময় ব্যবহার করছি, অন্যান্য কাজে ব্যবহার করছি। এলাকাভিত্তিক এটা করা সম্ভব। সক্ষমতার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী পাওয়া যাবে, অবকাঠামো পাওয়া যাবে। শুধু পরিকল্পনা দরকার।’
পথশিশুদের পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) এবং নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ মো. নুরুল বাসির বলেন, ‘পথশিশুদের জন্য আমাদের বছরব্যাপী পরিকল্পনা থাকে। এখন বিশেষ পরিস্থিতিতে সারাদেশের কমিটিগুলোকে বলে দেওয়া হয়েছে বয়স্কদের জন্য ভবঘুরে কেন্দ্র আছে, সেখানে রাখার জন্য। যদিও আমাদের সেই সিটগুলো প্রায় শেষ। ১ এপ্রিল থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের সহায়তায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভবঘুরেদের ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন সেন্টারে আশ্রয় দেবো। সেটা পথশিশু হোক আর ছিন্নমূল মানুষ হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারাদেশের কার্যক্রমের মধ্যেও প্রত্যেকটি সেন্টারে একটি করে আলাদা রুম কোয়ারেন্টিনের জন্য রেখেছি। কারণ বাইরে থেকে যে আসবে সে যদি কারও সঙ্গে মেশে, তাহলে সংক্রমণ হতে পারে। আমরা হয়তো সবাইকে পাঠাতে পারবো না, কিন্তু আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি পথশিশুদের ব্যাপারে।’