সাড়ে ৬ বছরের শিশুকে ২০ বছর দেখিয়ে মামলা!

বিশ বছর বয়স দেখিয়ে সাড়ে ৬ বছরের শিশু মো. শাকিলের বিরুদ্ধে হামলা ও মারধরে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এতে শিশুটিকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেলেও নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকালে বাবা মোখলেছুর রহমানের কোলে চড়ে ভোলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিতে আসে শিশু শাকিল; সঙ্গে আসেন তার মা রুনু আকতারও। তাদের বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার দিদারউল্লা গ্রামে।


গত ১১ এপ্রিল একই গ্রামের আ. মান্নান বাদী হয়ে মো. শাকিলকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে দৌলতখান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি এজাহার করেন।
অন্য আসামিরা হলেন: শাকিলের বাবা মোখলেছুর রহমান, চাচা মাহে আলম, দাদা আবদুল খালেক, মা রুনু আকতার ও চাচি নাসিমা বেগম।

তবে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে মামলাটি করা হয়েছে বলে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা মিথ্যা বলে দাবি করেন শিশুটির বাবা মোখলেছুর রহমান।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল আ. মন্নান বাদী হয়ে শিশু মো. শাকিলকে প্রধান আসামি করে দৌলতখান থানায় মামলা করেন। অভিযোগে শাকিলের বয়স উল্লেখ করা হয় ২০ বছর। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী শাকিলের বয়স মাত্র  ৬ বছর ৭ মাস (জন্ম তারিখ ২৩/১১/১৬)। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়: শাকিলের নেতৃত্বে আসামিরা হামলা চালিয়ে বাদী ও সাক্ষীদের হত্যার উদ্দেশ্যে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে এবং নারীদের শ্লীলতাহানি করে।

গত ১২ এপ্রিল আদালত ১ থেকে ৪ নং আসামির বিরুদ্ধে এফআইআর নেয়ার জন্য দৌলতখান থানাকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে ১৫ এপ্রিল দৌলতখান থানায় মামলা রুজু হলে ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জামিন নেন শাকিলসহ অন্য আসামিরা। নিম্ন আদালতে ওই জামিন বলবৎ থাকলেও এ পর্যন্ত চারবার হাজিরা দিতে হয়েছে।

আদালত চত্বরে বসেই শাকিলের বাবা মোখলেছুর রহমান জানান, তার জমি আত্মসাৎ করার জন্য প্রতিপক্ষ মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করছে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জমির ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ তার শিশু ছেলেকে প্রধান আসামি করে সাজানো মামলায় তার পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। মামলায় যেই তারিখ ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে তখন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ঢাকায় চাকরি করা ভাই ও ৮৫ বছর বয়সী বাবাকেও আসামি করা করা হয়েছে শুধু হয়রানি করার জন্য।

শাকিলের মা রুনু আকতার জানান, ছেলে আদালতে আসলে তাকেও সঙ্গে আসতে হয়। অপরিচিত স্থান ও অনেক মানুষজন দেখে ভয় পায় শাকিল। এ কারণে তিনিও সঙ্গে আসেন। এমন ভোগান্তি থেকে তিনি মুক্তি চান।

শাকিলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অ. অদিল মাহামুদ রোম্মান জানান, এ বয়সের একটি শিশুর পক্ষে হামলায় নেতৃত্ব দেয়া বা কাউকে পিটিয়ে আহত করা সম্ভব না। মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে অবৈধভাবে শিশুর বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত শিশুটি মারামারি করেনি বলে স্বীকার করেন খোদ বাদী আবদুল মন্নানও। তিনি জানান, ভুলবশত এজাহারে এ শিশুর নাম এসেছে। শাকিলের বড় ভাইয়ের নামের পরিবর্তে তার নাম লেখা হয়েছে।

মামলার ৬ নম্বর সাক্ষী ও বাদীর ভাই মো. রুহুল আমিন জানান, তাদের বিরুদ্ধে শাকিলের বাবা একটি মামলা করেছিলেন; এটা তার কাউন্টার মামলা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, আদালতের আদেশে থানায় মামলাটি হয়েছে। মামলার তদন্তকাজ অনেকটাই শেষ। সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করবে।

মামলার বাদী ও শিশু শাকিলের পরিবার পরস্পর আত্মীয়। এদের মধ্যে জমি নিয়ে বিভিন্ন আদালতে মামলা রয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *