সামাজিকীকরণের উপাদান হোক সুস্থ বিনোদন

আধুনিক সময়ে আকাশসংস্কৃতির কল্যাণে মানুষের চিত্তাকর্ষণের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে এখন নখদর্পণে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমাদের সমাজের তরুণ প্রজন্মের ভালো দিক গ্রহণ করার চেয়ে বিপরীত দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্যণীয়। তাদের চিন্তা, চেতনা এবং সামাজিকীকরণ গড়ে উঠছে অসুস্থ বিনোদনের মধ্য দিয়ে।

শিশু-কিশোররা অনুকরণপ্রিয়। যে বয়সে শিশু-কিশোরদের ছোটাছুটি করার কথা খোলা প্রান্তরে, সে বয়সে তাদের সঙ্গী এখন মোবাইল, টিভি ও কম্পিউটার স্ক্রিন। আমাদের মনমানসিকতায় ফেসবুক-ইউটিউবের উগ্র জীবনধারা প্রভাব ফেলে। বিনোদনের নামে সেলুলয়েড ভুবনে চলছে উঠতি বয়সিদের রুচিহীন করার ন্যক্কারজনক মহড়া। কারণ আমাদের ফ্রেন্ড, ফিলোসোফার অ্যান্ড গাইড হলো ভিজুয়াল বিনোদনমাধ্যম। দুধের বয়সি বাচ্চা যখন বলিউডের হার্টথ্রব নায়িকার অনুকরণ করে ‘চুম্মা চুম্মা দে দো’ গানে নাচছে, আমরা তখন চোখ ভরে দেখে মন ভরে মজা নিচ্ছি। আর আমরা ভুলতে বসেছি ‘সাংস্কৃতিক শক্তি নির্বিচারগ্রহণে নয়, বিচার-বিবেচনাবোধের সাহায্যে তাকে পরিশ্রুত করতে হয় স্বকীয়তার মাধ্যমে’।

সত্তর-আশির দশকে গুণী লেখক ও নির্মাতাদের দ্বারা সিনেমা, নাটক আর গানগুলো থেকে কিছু শিখে জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করা গেলেও একুশ শতকে এসে উঁচুমানের সাহিত্য-সংস্কৃতি আর সেখানে স্থান পায় না। অতিপ্রাকৃতিক কাহিনি, অশালীন সংলাপ আর খোলামেলা পোশাকের সিনেমায় এখন কে কত রক্ত, যৌনতা, পারভার্শন এসব দেখাতে পারে, তার প্রতিযোগিতা চলে। নবাগত শ্রেণির নির্মাতা ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে ‘পাবলিক খায়’ ফ্যান্টাসিতে ফোকাস করে ছবির মান গাছে তুলছে। অথচ সংস্কৃতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেছেন ‘সংস্কৃতি মানে বাঁচা, সুন্দরভাবে বাঁচা’! সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আয়ের সুযোগ বাড়াতে সংস্কৃতির নামে সর্বস্তরে যৌনতা ছড়াতেও নির্মাতাদের রুচিতে বাঁধে না। মূল্যবোধের সংকটে পীড়িত মানুষের কাছে এই কুসিত সিনগুলো ‘ভালোভাবে চিত্রায়ণ’ মনে হলেও একজন রুচিস্নিগ্ধ মানুষের কাছে দৃশ্যগুলো চরম ডিস্টার্বিং এবং ডিপ্রেসিং। অতএব, বিনোদন দেওয়াই যদি মূল লক্ষ্য হয়, তবে নির্মাতার কলম হোক সৃজনশীলতার, চিত্তবিনোদন হোক সুস্থ সংস্কৃতির।

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *