শিশুর সামাজিকীকরণে স্কেটিং

পা চলবে, কিন্তু হাঁটতে হবে না—এরই নাম স্কেটিং। শুধু দ্রুতগতিতে চলার জন্য নয় বরং স্কেটিং এক ধরনের খেলা। যা শরীর গঠনে বেশ ভূমিকা রাখে এবং অবসরে দেয় বিনোদন। শুরুতে বাচ্চাদের শখ মেটানোর জন্য স্কেটিং চালু হলেও ক্রমশ কালক্রমে এটি এক ধরনের জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়েছে। শিশুর মানসিক বিকাশ ও বিনোদনের বেশ ভূমিকা রয়েছে। শহরের তীব্র যানজটময় রাস্তায় লম্বা সারি বেঁধে আটকে থাকা গাড়িকে অতিক্রম করে নির্বিঘ্নে ছুটে চলে একেক জন স্টেকটসম্যান। এ যেন সুপারম্যান না হয়েও সুপারম্যান হওয়ার সক্ষমতা! স্কেটিংয়ের এসব গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মানসিক বিকাশের পাশাপাশি শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে স্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

ছোট্ট শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন অন্যান্য প্রাণী শাবকের সঙ্গে তার মৌলিক বৈশিষ্ট্যের তেমন একটা তফাত থাকে না। কিন্তু দিন যতই যেতে থাকে তার সঙ্গে অন্যান্য প্রাণী শাবকের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের যথেষ্ট স্বতন্ত্র তফাত পরিলক্ষিত হয়। এই তফাতের মূলে মানবিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য উভয়ই কাজ করে; এগুলো শিক্ষণের প্রক্রিয়াই হলো সামাজিকীকরণ। অর্থাৎ সামাজিকীকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ছোট্ট শিশু সমাজের বিধিসম্মত আচারণ আত্মস্থ করে এবং এর ভিত্তিতেই মানবিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে সমাজব্যবস্থার সদস্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলে।

সামাজিকীকরণের যেসব বাহন বা নিয়ামক আছে তন্মধ্যে খেলাধুলা ও খেলার মাঠ অন্যতম। বাস্তবিক অর্থেই, শিশুর সামাজিকীকরণের ডায়ারিতে ইন্টারনেট দুনিয়ার আবির্ভাবই শারীরিক খেলাধুলা থেকে তাকে দূরে ছুড়ে ফেলেছে। ঠিক এমন একটি পরিস্থিতিতে স্কেটিং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। স্কেটিংয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমে শিশুর অনলাইন আসক্তি এবং মোবাইল গেমিং নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এতে করে তারা সমবয়সি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশার সুযোগ পাবে; ফলশ্রুতিতে সমাজ ও সামষ্টিক আচারণবিধি, মূল্যবোধ ইত্যাদি সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা লাভ করতে পারবে।

মনীষীদের মতে, সামাজিকীকরণ হলো শিক্ষণের একটি অংশ। অনুকরণ হলো এই শিক্ষণ প্রক্রিয়ার আলোচিত একটি উপাদান।  জোরালোভাবে বলা যায়, মানুষ মাত্রই অনুকরণপ্রিয়। এ কথা শিশুদের ক্ষেত্রে আরো বেশি করে প্রযোজ্য। গবেষণায় উঠে এসেছে, বড়দের থেকে ছোটদের অনুকরণের ক্ষমতা অনেক বেশি। ছোটদের এই অতিমাত্রায় অনুকরণপ্রিয়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের খুব সহজেই স্কেটিংয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায়। এর ফলে ডিভাইস কিংবা অপ্রয়োজনীয় আড্ডার গ্রাস থেকে তাদের রক্ষা করা সহজতর হতে পারে।  পরিহারে স্কেটিংয়ের প্রতি বেশি বেশি আগ্রহ বাড়াতে হবে এবং তাদের জন্য বেশি বেশি স্কেটিং সম্পর্কিত খেলাধুলার ইভেন্ট তৈরি করতে  হবে ।

শিশুদের খেলাধুলার পরিবেশ বিষয়ে বেশকিছু গবেষণাপত্রের ফাইন্ডিং পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যান্ত্রিক শহরে খেলাধুলার পরিবেশ এবং জায়গার স্বল্পতা বর্তমানে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে স্বল্প জায়গায় সন্তানের বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে স্কেটিং নিঃসন্দেহে অন্যতম একটি জনপ্রিয় খেলা। ইদানীং বেশকিছু ক্ষেত্রে লক্ষ করা যাচ্ছে, মনন ও মেধা বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হিসেবে সন্তানের হাতে স্কেটিংয়ের সারঞ্জমাদি তুলে দিচ্ছেন অভিভাবক—যা বহুল কাঙ্ক্ষিত।

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্কেটিংয়ের চর্চা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে অলিম্পিকে যুক্ত হয়েছে স্কেটিং। অর্থাৎ, সামাজিকীকরণের সঙ্গে সঙ্গে নিজের দেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার ক্ষেত্রেও স্কেটিং অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। কাজেই, শিশুর জীবনাচরণে স্কেটিং যুক্ত করা এখন সময়ের দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924