শিশু যখন খেতেই চায় না

আমরা শিশুদের জন্যে ‘হ্যাঁ’ বলে থাকি। কিন্তু শিশুরা আমাদের জন্যে ‘হ্যাঁ’ বলে না বললেই চলে। বিশেষ করে খাবার দাবারের ব্যাপারে তো কখনোই বলে না। যত মজা করে খাবার বানিয়েই আপনি তার কাছে যান না কেন, সে দৌড়ে পালাবে। দৌড়ে পালানোর সুযোগ না থাকলে সে এমন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে যে, আপনি হার মানতে বাধ্য হবেন। তবু যদি জোর করে দু-এক লোকমা তার মুখে তুলে দেন, সঙ্গে সঙ্গে সে ওয়াক থু বলে ফেলে দেবে। ভাবটা এমন, যেন আপনি তাকে জগতের সবচেয়ে অখাদ্য বস্তুটি খাইয়েছেন। কিন্তু এভাবে তো চলবে না। তার বেড়ে ওঠার জন্যে অবশ্যই খাদ্য দরকার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাকে খাওয়াবেন কিভাবে। প্রায় সব বাবা-মারই প্রশ্ন এটা।

এই প্রশ্নের জবাবে এতটুকুই বলা যায়, শিশুকে খাওয়াতে হলে প্রথমেই তার মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টা বুঝতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে তার শিশুসুলভ আচরণগুলোকে। তার তেমনই একটি আচরণ হলো, সে অনুকরণ করতে ভালোবাসে। তার এই অনুকরণের সূত্র ধরেই এগুতে হবে আপনাকে। আর তারই অংশ হিসেবে খাবারের টেবিলে বড়দের খাবারের পেলেটের পাশাপাশি তার জন্যেও একটি পেলেট রাখুন। খাবার ভর্তি প্লেট, সেইসঙ্গে চামচ। তবে এসব যেন অবশ্যই রঙচঙা হয়। কারণ শিশুরা রঙচঙা জিনিস পছন্দ করে। তার জন্যে প্লেটে এবং চামচ রাখার কারণ হলো, বড়রা যখন খাবে তখন সে সেটা অনুকরণ করবে। অর্থাৎ কেউ তাকে খাওয়ার জন্যে তাগাদা না দিলেও সে সবার দেখাদেখি খেতে থাকবে। এভাবে একসময় তার পেট ভরে যাবে। শিশুদের খাবার আইটেমও যদি রঙঢঙা হয়, তাহলে ভালো হয়। এর জন্যে খাদ্য তালিকায় গাজর, লাল শাকসহ আরো যেসব রঙিন উপকরণ আছে, সেগুলো রাখা যেতে পারে।

শিশুর খাবারকে যত বেশি আকর্ষণীয় ও লোভনীয় করা যায় ততই সে সহজে লুফে নেবে খাবারটি। এর জন্যে আপনি যা যা করতে পারেন তা হলো—

    • অমুক আইটেমটি খেতেই হবে, না খেলে চলবে না—এ ধরনের মনমানসিকতা ত্যাগ করুন। শিশু যে খাবারটি পছন্দ করে, সেটাই খেতে দিন। তার পছন্দের খাবারটি অস্বাস্থ্যকর না হলেই হলো। আসলে শিশুকে জোর করে কোনো খাবার খাওয়াতে গেলে খাবারের ব্যাপারে তার মনে শুধু বিতৃষ্ণাই নয়, ভয়ও কাজ করবে।
    • কার্টুন পছন্দ করে না—এমন শিশু খুঁজে পাওয়া যাবে না। কার্টুনের চরিত্র একেকজন শিশুর কাছে প্রিয়। আপনি খেয়াল করুন আপনার শিশুটির কাছে কোন কার্টুনের কোন চরিত্রটি প্রিয়। তারপর যখন তার জন্যে হালুয়া বা এই জাতীয় অন্যান্য খাবার তৈরি করবেন, তখন খেয়াল রাখবেন, খাবারের আকৃতিটি যেন তার প্রিয় কার্টুন চরিত্রটির মতো হয়। দেখবেন সে খাবারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।
    • অনেক বাবা-মাই আছেন, যারা তার শিশুটিকে খাওয়ানোর জন্যে একেবারে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এতটা মরিয়া হওয়ার দরকার নেই। কারণ, আপনি যখন তাকে সারাদিনই খাওয়াতে চাইবেন, তখন তার মনে একটা দুষ্টুমি ঢুকে যাবে। খাবার দেখলেই পালিয়ে যাওয়াটাকে সে একটা খেলা হিসেবে ধরে নেবে। তখন পড়তে হবে বিপদে। তাই খাবার নিয়ে তার পেছনে যখন তখন না ছুটে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। দেখবেন তার যখন ক্ষুধা লাগবে, তখন সে এমনিতেই খাবার খুঁজবে।
    • ঘরে নানারকম খাবার রাখুন। তারপর তার সামনে সবগুলো খাবার রাখুন। দেখবেন সে যে কোনো একটা অবশ্যই বেছে নেবে। মনে রাখবেন, যদি আপনি তার সামনে খাবারগুলো না দিয়ে এমনিতে জিজ্ঞেস করেন কী খাবে, তাহলে সে কিছুই খেতে রাজি হবে না। তাই তাকে জিজ্ঞেস না করাই ভালো।
    • ছড়া পছন্দ করে না, এমন শিশু একটিও পাবেন না। তাই আপনার শিশুটিকে যখন আপনি খাওয়াবেন, নানারকম ছড়া কাটবেন। এর জন্যে প্রয়োজন হলে আপনি নতুন নতুন শিশুতো ষ ছড়া মুখস্ত করে নেবেন। কারণ, শিশুরা গতানুগতিক ছড়াগুলোর পাশাপাশি নতুন কিছুও শুনতে পছন্দ করে।
  • খাওয়াতে গেলে শিশুটি যত দুষ্টুমিই করুক না কেন, আপনার মাঝে যেন বিরক্তি না আসে। তাকে আদর করে খাওয়ান। দেখবেন সে কম হোক বেশি হোক—খাবেই। কারণ শিশুদের আদরের কোনো বিকল্প নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924