শিশু-কিশোরদের সুন্দর মানসিক বিকাশের উদ্যোগ

সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজের গণিত বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম শিমুল। শিমুলের আরেকটি পরিচয় হলো, সে প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সদস্য। গত বছরের মার্চে করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে সে সিলেট ছেড়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় নিজ বাড়িতে চলে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলায় এখনো বাড়িতেই আছে। বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে খেয়াল করছিল, গ্রামের শিশু-কিশোরদের আগের মতো খেলার মাঠে কিংবা বই পড়ায় আগ্রহ নেই। তারা এসবের পরিবর্তে মোবাইল নিয়ে কিংবা টেলিভিশন দেখে সময় কাটায়। বিষয়টি তার ভাবনায় নাড়া দেয়। চিন্তা করে এসব শিশুদের আনন্দের সঙ্গে সৃজনশীল এবং শিক্ষামূলক কাজে উৎসাহিত করতে হবে। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই শিশু-কিশোরদের জন্য ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে এক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এই আয়োজনে পাড়ার আরও কয়েকজন তরুণ তাকে সহযোগিতা করে।

কিছুদিন আগে এমন উদ্যোগের কথা সে ফোনে জানায়। এত ভালো একটি উদ্যোগের কথা শুনে আমিও শিমুলকে উৎসাহিত করি। প্রতিযোগিতা শেষে আয়োজনের ছবিগুলো সে আমাকে পাঠায়। মুগ্ধতা ছড়ানো সেসব ছবি দেখে শিমুলকে মনে মনে ধন্যবাদ জানাতে থাকি। তখনো শিমুলের সঙ্গে এই আয়োজন নিয়েই ফোনকলে কথা বলছিলাম। সে জানায়, করোনার সৃষ্ট মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে অবস্থান করছি। বাড়িতে থাকায় বাড়ির ছোটদের আচার-আচরণ, মোবাইলের প্রতি তীব্র আকর্ষণ—সবকিছু নজরে পড়ছিল। বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত এবং উদ্ধিগ্ন ছিলাম। তাই তাদের সৃজনশীল কাজের সঙ্গে পরিচয় এবং সৃজনশীল কাজের চর্চায় আগ্রহী করতে সাধ্যমতো ছোট পরিসরে আমরা আমাদের বাড়ির এবং প্রতিবেশী ছোটদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। এতে শিশু-কিশোরদের থেকে শুরু করে অভিভাবকদের এতটা সাড়া পাব ভাবিনি। কুলাউড়া উপজেলার মাস্টার শরাফত উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদ আলী উপস্থিত থেকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বাহবা দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের শহরগুলোর মতো গ্রামেও এমন আয়োজন নিয়মিত প্রয়োজন। উল্লেখ্য, শহরে এসব প্রতিযোগিতা নিয়মিত হলেও গ্রামে খুব একটা হয় না বললেই চলে।

শিমুলের এই আয়োজনে ১৬ জন শিশু-কিশোর অংশগ্রহণ করে। সন্ধ্যাতারা, শুকতারা, ধ্রুবতারা নামে তিনটি ক্যাটাগরি করে শিশু-কিশোরদের ভাগ করা হয়। সন্ধ্যাতারা ক্যাটাগরিতে শিশু শ্রেণির জাওয়াদ, শামা, মাহমুদ এবং মিনহাজ অংশগ্রহণ করে। শুকতারা ক্যাটাগরিতে ১ম ও ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী মুমু, রিম, সাইফ, মাহেদ এবং আঁখি অংশগ্রহণ করে। ধ্রুবতারা ক্যাটাগরিতে ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিমু, নিহা, অয়ন, রিতু, হিমেল, মামুন ও শিমু অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা প্রতিটি শিক্ষার্থীর আগ্রহ এবং উৎফুল্লতা ছিল চোখে পড়ার মতো বলে জানায় শিমুল। ছবিগুলো দেখেও এমনটাই যেন মনে হচ্ছিল।

৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মামুনের কাছে প্রতিযোগিতার বিকেলটি ছিল নাকি ঈদের দিনের মতো! আর ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহেদ এবং মুমুর উচ্ছ্বাস নাকি আরও বেশি। পরে কবে এমন আয়োজন আবার হবে, সেই অপেক্ষায় এই দুই শিশু। এত সুন্দর এই আয়োজনে শিমুলের সঙ্গে সৌরভ, এনায়েত, জুবায়ের, মিতি ও শাওন যুক্ত ছিল।

লেখক: দেবাশীষ রনি, শিক্ষার্থী, স্নাতকোত্তর, গণিত বিভাগ, এমসি কলেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *