শিশুর হিটস্ট্রোক হলে করণীয়

 

গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশব্যাপী প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। অসহনীয় গরমে বয়স্ক মানুষেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ঠাণ্ডা ও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। মাত্রাতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা রয়েছে। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।  

এই গরমে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি। তা না হলে তারা যে কোনো সময় হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে, যা পরিবারের সবার স্বস্তি কেড়ে নেবে। তীব্র দাবদাহে আপনার শিশুর সুরক্ষায় নিচের বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিন। 

শিশুকে ছায়া-শীতল পরিবেশে রাখুন 

শিশুদের হিটস্ট্রোক থেকে সুরক্ষায় সব চেয়ে জরুরি হলো, এই সময় যতটা সম্ভব তাদেরকে ঘরে কিংবা ছায়া-শীতল পরিবেশে রাখতে হবে। তাদেরকে এখন কোনোক্রমেই রোদে যেতে দেওয়া যাবে না। এটা আম কুড়ানোর সময়। আমের লোভে গ্রামের শিশুরা বাইরে যেতে চাইবে; তারা খেলাধুলা করে, দৌড়াদৌড়ি করে, পুকুরে ঝাপ দেয়। অর্থাৎ বাড়ির বাইরে চলে যায়। কিন্তু এখন বাড়ির বাইরের তাপমাত্রা অসহনীয়। কাজেই অধিকতর নিরাপদ হলো, শিশুদেরকে ঘরের ভেতরে রাখা। এক্ষেত্রে বারান্দায়ও রাখা যেতে পারে। গ্রামে-গঞ্জে বিদ্যুতের সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, বৈদ্যুতিক ফ্যানগুলো সচল আছে কিনা।

এ সময় শিশুরা যেন পানিশূন্যতার ঝুঁকিতে না পড়ে সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বাইরের তাপমাত্রা ৪১ হলে, আর শরীরের মাত্রা যদি থাকে ৩৫ থাকলে পরিবেশ তার পানি শুষে নেবে। এই পরিস্থিতিতে শিশু খাবার গ্রহণ করুক আর না করুক—খেয়াল রাখতে হবে, কিছুক্ষণ পর পর সে যেন একটু পানি পান করে। গ্রামে-গঞ্জে ডাবের পানি পাওয়া যায়। ডাব না পাওয়া গেলে শহরের শিশুদের পানি পান করানো যেতে পারে। এই তরলগুলো অধিক পরিমাণে খাওয়াতে হবে।

লক্ষ্য রাখুন প্রস্রাবের দিকে

এর পাশাপাশি শিশুদের প্রস্রাবের দিকে খেয়াল রাখা। কারণ পানিশূন্যতা দেখা দিলে প্রস্রাব গাঢ় হয়ে যাবে এবং পরিমাণ কমে যেতে পারে। অথবা অনেক সময় দেখা যায়, ৮-১০ ঘণ্টা পর্যন্ত শিশু প্রস্রাব করছে না। অধিক পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে এই অবস্থা থেকে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

মোটা দাগে কথা হলো, এই সময়ে যেহেতু শিশুর শরীর থেকে পরিবেশ আর্দ্রতা শুষে নিতে পারে, এজন্য যতটা সম্ভব বাইরের পরিবেশে যেতে না দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তাদেরকে ঘরে ও ছায়ায় থাকা নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুতের মাধ্যমে শিশুর চারপাশ শীতল রাখতে। সেই সঙ্গে অধিক হারে তরল খাবার সরবরাহ করতে হবে, যাতে পানিশূন্যতা, প্রস্রাব কমে যাওয়া ও ব্লাড প্রেসারের কোনো প্রভাব ওর ওপর না পড়ে।

এই সময়ে তাদেরকে শরবত বা স্যালাইন দেওয়া যাবে। তবে শরীরের পানিশূন্যতা দেখা দিলে শরবত বা স্যালাইন জরুরি না, পানি ও ডাবের পানি বেশি উপকারী। এ ক্ষেত্রে ফলের জুসও দেওয়া যেতে পারে।

শিশুর হিটস্ট্রোকে করণীয়

শিশুর হিটস্ট্রোক হলে বুঝতে হবে, এটা অত্যধিক গরমের কারণেই হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওর শরীর দ্রুত শীতল করার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য স্বাভাবিক পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে। ফ্যানের নিচে বসিয়ে দিলেও শরীর শীতল হবে।

অত্যধিক গরমে শিশুদের উচ্চমাত্রার জ্বর দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে শীতলতা নিশ্চিত করা গেলে শিশুর জন্য আর ঝুঁকির কিছু থাকবে না।
-মেডিভয়েস

অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা।
শিশু বিশেষজ্ঞ
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *