শিশুর যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে

একটি সুন্দর স্বাভাবিক শিশু পরিবারে আনন্দ বয়ে আনে চারদিক থেকে। আজকাল অনেকেরই অভিযোগ, শিশুরা বাইরের মানুষের সঙ্গে মিশতে চায় না। তারা বেড়ে উঠছে অসামাজিকভাবে। শিশুদের এমন আচরণের জন্য পরিবারও যে অনেকটা দায়ী, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। শিশু অসামাজিক বা যোগাযোগে অক্ষম হলে জীবনের প্রতি পদে পদে তৈরি হয় সমস্যা। তাদের মধ্যে কীভাবে যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানো যায় তা জানিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার।

 তিনি জানান, যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে কোনো অবস্থায় শিশুদের মোবাইল ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। শিশু তার চারপাশের পরিবেশ থেকে শেখে। পারিপার্শ্বিক শব্দভান্ডারগুলো তার মস্তিষ্ক গ্রহণ করে। বাচ্চাদের সব শব্দ শেখাতে হয় না। সে নিজে থেকে অনেক শব্দ শিখে যায়। মোবাইলের মতো এতো আকর্ষণীয় বস্তু তার কাছ থেকে কৌশলে সরিয়ে দিতে হবে।

মেখলা সরকারের ভাষায়, বর্তমানে একক পরিবারের সংখ্যা বেশি। তাই শিশুরা বেশি মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছে না। এ কারণে যোগাযোগও বাড়াতে পারছে না। তাই শিশুদের বেশি বেশি করে মানুষের সঙ্গে মিশতে দিতে হবে। বাবা-মা দু’জনকেই আলাদা করে সন্তানের সঙ্গে বেশি কথা বলতে হবে।

ডা. মেখলা বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, বাবা-মা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে শিশুর অনেক ক্ষতি হয়। এজন্য বাবা-মাকে মোবাইল ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। বাবা-মার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, অর্থাৎ নাক, মুখ ও চোখের অভিব্যক্তি তাকে অনেক কিছু বুঝতে সহযোগিতা করে। তাদের হাত-পা নাড়িয়ে কথা বলা, কোনো কিছু বর্ণনা করে বোঝানো শিশুর যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ডা. মেখলার মতে, একটি শিশুকে তার বয়সী অন্য শিশুর সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। এটি তার অধিকার। এখন পরিবারগুলোতে বাচ্চাকাচ্চা এমনিতেই কম। তাদের কাজিনদের সঙ্গে কথা বলাও হয় কম। ছুটির দিন হোক বা কোনো অনুষ্ঠানে হোক, ভাইবোনদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ তৈরি করতে হবে।

মেখলা সরকার বলেন, আজকাল অনেক কর্মজীবী বাবা-মা শিশুদের ডে-কেয়ারে রাখেন। সেখানে তাদের বয়সী শিশুদের সঙ্গে থাকলে যোগাযোগ দক্ষতা বাড়তে পারে। তাঁর মতে, সেখানে শিশুদের অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে তোমার নাম কী, কোথায় থাক এ ধরনের কথাবার্তা বলতে উৎসাহিত করতে হবে।

ডা. মেখলা বলেন, শিশু কোনো নতুন শব্দ শিখলে তার প্রশংসা করতে হবে। তাকে আবৃত্তি, গান শেখানো যেতে পারে। নানা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বা আমি একটা শব্দ বলব, বাকিটা তুমি বলো এভাবে দক্ষতা বাড়ানো যেতে পারে। কোনোভাবে মোবাইলে কবিতা শেখানো ঠিক নয়।

মেখলা সরকারের ভাষায়, শিশুর যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বাসায় বা কোনো প্লে গ্রাউন্ডে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, একই আত্মীয়ের বাসায় যেন বারবার না যাওয়া হয়। বেড়াতে যাওয়া মানেই খাবারদাবারের দোকানে গিয়ে বসে থাকা ঠিক নয়। তাঁর মতে, শিশুর যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে কথা বলায় বৈচিত্র্য থাকতে হবে।

ডা. মেখলা বলেন, কিছু মা আছেন বাচ্চাকে কারও কাছে ছাড়েন না। তা করা যাবে না। কেউ বাচ্চার খাবারের দায়িত্ব নিক। তার কাছ থেকে বাচ্চা কিছু শিখবে। হয়তো পুরোপুরি সন্তুষ্ট হবেন না। তবুও বাচ্চাকে মিশতে দিতে হবে। কিছু বাচ্চা আছে স্কুলে গিয়ে কারও সঙ্গে মিশতে পারে না। কোনো কিছু শেয়ার করতে পারে না। অ্যাংজাইটিতে ভোগে। যোগাযোগ দক্ষতা কমার জন্যই এগুলো হয়। দেখা যায়, যেসব বাবা-মায়ের প্রচুর বন্ধুবান্ধব আছে, বাসায় আসা-যাওয়া করে, তারা খুব সহজেই সামাজিক হয়। মিশতে পারে। মোট কথা, সব বয়সেই খেয়াল রাখতে হবে তাঁর বাচ্চা কীভাবে বড় হচ্ছে। প্যারিংটিতে কোনো ভুল আছে কিনা বাবা-মাকে তা জানতে হবে। তাহলেই একটি শিশু সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে বড় হতে পারবে। সামাজিকতায় মিশতে পারবে।

* মোবাইলের মতো আকর্ষণীয় বস্তু শিশুর কাছ থেকে কৌশলে সরাতে হবে

*বাবা-মা দু’জনকেই আলাদা করে বেশি বেশি কথা বলতে হবে সন্তানের সঙ্গে

*  শিশুকে তার বয়সী অন্য শিশুর সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে

*  শিশু কোনো নতুন শব্দ শিখলে তার প্রশংসা  করতে হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *