শিশুর মানসিক বিকাশ বৃদ্ধিতে করণীয়

বর্তমান সময়ে অনলাইনের প্রতি শিশুর আসক্তি কিংবা নির্ভরশীলতার আকার ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর অতি নির্ভরশীলতা শিশুর সুরক্ষিত পৃথিবীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। খুব ছোট বয়সে শিশুর কান্না থামানোর জন্য চাঁদমামা অথবা কাজলা দিদির কবিতা না শুনিয়ে তার হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়ার মতো ভয়াবহ কাজটি করে থাকেন আজকের সমাজের অনেক বাবা-মা। যার ফলে শিশু বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা, যা প্রতিটি মুহূর্তে শিশুর জীবনে অদৃশ্য ক্ষতের সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা শুধু যে সময়ের ক্ষতি করে তা নয়, শারীরিক এমনকি মানসিক সংকটও দানা বাঁধে শিশুর মস্তিষ্কে।

দেশে অনবরত খেলার মাঠ দখল হচ্ছে, খোলা জায়গা ভরাট করে দালান-কোঠা, কল-কারখানা তৈরি হওয়ায় শিশুরা চার দেয়ালে বন্দি হয়ে থাকতেও বাধ্য হচ্ছে, যা আগামী প্রজন্মকে এক প্রকার অন্ধ বানিয়ে ফেলছে। শিশুর সুরক্ষিত পৃথিবী নিশ্চিত করতে এই নির্দিষ্ট সংকটগুলোর সমাধান করা অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ব্যাপারগুলোর মতোই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। প্রযুক্তিকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের চিন্তাশক্তিকে প্রতিনিয়ত একপেশে এবং আবদ্ধ করে তুলছে। বিভিন্ন জরিপে উল্লিখিত তথ্য ও উপাত্ত বলছে, তরুণদের এমন আবদ্ধ জীবনযাপনের ফলে তৈরি হওয়া হতাশার স্পষ্ট গল্প ও অদৃশ্য ক্ষতের অন্যতম প্রতিচ্ছবি। কম্পিউটার মনিটর বা মোবাইল ফোনের বাইরেও সুন্দর একটি সামাজিকীকরণ ব্যবস্থার পৃথিবীতে আমাদের বসবাস; শিশুদের কাছে এই বার্তাটি পৌঁছানো আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। একজন শিশুকে অন্য দশ জন শিশুর সঙ্গে মাঠে খেলতে দেওয়ার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, সত্যবাদিতাসহ সমাজের সব মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করার মানসিক ভিত্তি মূলত তৈরি হয় এই সময়ে। শিশুকে অন্যের বিপদে এগিয়ে যাবার শিক্ষা দিন।

একটি শিশু মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে যে শিক্ষালাভ করবে; বাস্তবজগতে প্রযুক্তিগত শিক্ষা তার একাংশও দিতে পারবে না। আধুনিক পৃথিবীতে তাল মিলিয়ে চলতে যদিও প্রযুক্তির বিকল্প নেই, তবে তার ওপর নির্ভরশীলতা এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। শিশুর মানসিকতা বিকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো পরিবার। পারিবারিক সংকট অথবা দূরত্ব শিশুর মনুষ্যত্বকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাবা-মায়ের দায়িত্ব সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে স্নেহ-মমতার আভিজাত্য অনুভব করানোর পাশাপাশি তাকে সময় দেওয়া। সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে বাস্তবমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই। পৃথিবীর কোনো প্রান্তে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর একটি সুন্দর সমাজ উপহার হিসেবে পাওয়ার অধিকার আছে। তাবেই শিশু বড় হয়ে সেই সৌন্দর্যের পরিচর্যা করতে জানবে। সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে শিশুর মেধা ও মনন, চিন্তাশক্তি এবং মানসিকতার উন্নয়নে সুস্থ ও সুন্দরের চর্চা করার জন্য প্রতিটি শিশুর একটি অবাধ বিচরণক্ষেত্রের প্রয়োজন; যা পরিচর্যা করার দায়িত্ব আমার, আপনার এবং আমাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *