যা করবেন শিশুদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে

মানুষের জীবনের অমূল্য সম্পদ হলো চোখ। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে দৃষ্টিশক্তির গুরুত্ব অনেক। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুর মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। তাই শিশুদের চোখের সার্বিক পরিচর্যায় সচেতন হওয়া দরকার।

শিশুর দৃষ্টিশক্তি বাধাগ্রস্ত হতে পারে যেসব কারণে

  • চোখের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মালে
  • অপরিণত বয়সে জন্ম হলে। বিশেষ করে যেসব শিশুর জন্মের পর লম্বা সময় ধরে অক্সিজেন দিতে হয়, তাদের চোখের রেটিনায় জটিল সমস্যা হতে পারে। এটি অনেক শিশুর অন্ধত্বের বড় কারণ।
  • চোখে আঘাত লাগলে
  • বারবার চোখে ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে
  • দীর্ঘ সময় ধরে ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতি। এতে শিশুর দৃষ্টিশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ, ভিটামিন এ চোখের শুষ্কতা প্রতিরোধ করে, চোখের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখে এবং চোখের জ্যোতি ঠিক রাখে।
  • লম্বা সময় ধরে টেলিভিশন, কম্পিউটার বা মুঠোফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে। এতে চোখের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমন চোখ শুষ্ক হয়ে যায়, চোখ জ্বালাপোড়া করে। অনেক শিশুর মায়োপিয়া বা দূরের জিনিস দেখতে কষ্ট হয়।

করণীয়

  • জন্মের পরপরই শিশুর চোখের কোনো সমস্যা আছে কি না, তা পরীক্ষা করাতে হবে। বিশেষ করে যেসব শিশুর জন্মের সময় ওজন কম থাকে, মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অথবা সংক্রমণের ইতিহাস থাকে, তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • যেসব শিশুর অপরিণত বয়সে অথবা কম ওজন নিয়ে জন্ম হয় এবং যাদের জন্মের পরপর শ্বাসকষ্ট ও রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণে দীর্ঘ সময় অক্সিজেন দিতে হয়, তাদের জন্মের এক মাসের মধ্যেই পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • জন্মের পরপরই শিশুকে শালদুধ দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ দিয়ে যেতে হবে। কারণ, শালদুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হয়। এ ছাড়া বুকের দুধে ভিটামিন এ–এর পরিমাণ অনেক বেশি।
  • শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পর ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন সবুজ শাকসবজি, গাজর, পালংশাক, মিষ্টিকুমড়া, ছোট মাছ, ডিম ইত্যাদি একটু বেশি তেল দিয়ে রান্না করে খাওয়াতে হবে। কোনো অবস্থাতেই টিনের দুধ বা টিনের খাবার দেওয়া ঠিক হবে না।
  • শিশুর চোখের যেকোনো ধরনের সংক্রমণে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ দিতে হবে। কিছুতেই নিজে নিজে দোকান থেকে ওষুধ কিনে তা ব্যবহার করা যাবে না।
  • শিশু লেখাপড়ায় ভালো না করলে, অমনোযোগী হলে বা মাথাব্যথায় ভুগলে অবশ্যই দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করাতে হবে।
  • শিশুর ৬ মাস বয়স থেকে ৫ বছর পর্যন্ত প্রতি ৬ মাস পরপর ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে।
  • একনাগাড়ে লম্বা সময় টেলিভিশন, কম্পিউটার বা মুঠোফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা বন্ধ করতে হবে।
  • ছোট শিশুদের চোখে সুরমা বা কাজল লাগানো ঠিক নয়।
  • দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় শিশুকে বাইরের আলোয় খেলাধুলা করার সুযোগ দিতে হবে। কারণ, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সূর্যের আলোর ভূমিকা আছে। তা ছাড়া খেলাধুলার ব্যায়ামে চোখের রক্তসঞ্চালন, অক্সিজেন সরবরাহ ভালো থাকে।
  • অতিরিক্ত রোদে যাওয়ার আগে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
  • শিশুদের পড়ার ঘরে পর্যাপ্ত আলো থাকতে হবে।
  • অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা, বিভাগীয় প্রধান, শিশুরোগ বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *