বাসাবো মাঠের এত রূপ

বাসাবো এলাকার বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ হীরা। তার দুই সন্তান। কিন্তু সন্তানদের খেলার জন্য এলাকায় উপযোগী কোনো মাঠ ছিল না। এমনকি শিশুদের ছোটাছুটি করে বেড়ানোর জন্য খোলা জায়গাটুকু পর্যন্তও ছিল না। এই বিষয়গুলো ভেবে এতদিন তিনি বেজায় নাখোশ ছিলেন। তবে তার চাপা অসন্তোষ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে রূপ নিয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ বাসাবো খেলার মাঠকে নবরূপে সাজিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নেয়ার সুযোগ দিয়েছে এলাকাবাসীকে। করে দিয়েছে শিশুদের হৈ-হুল্লোড়, খেলাধুলার সুযোগ।

basabo-02.jpg

ঘরের পাশেই এমন সাজানো-নয়নাভিরাম মাঠ উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছে এলাকাবাসীকে। সেই উচ্ছ্বাস জাগো নিউজের কাছে প্রকাশ করছিলেন সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, বাসাবো খেলার মাঠটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় এমন দৃষ্টিনন্দন রূপ পেয়েছে যে, এলাকাবাসী আনন্দে ভাসছে। এমন নয়নাভিরাম মাঠ যে বাসাবোবাসী পাবে, সে কথা আমরা কখনো চিন্তাও করিনি। পার্কের রূপ দেয়া এই মাঠে আজ আমাদের সন্তানরা ছোটাছুটি করতে পারছে, খেলতে পারছে, হৈ-হুল্লোড় করতে পারছে। আনন্দে মেতে থাকছে সর্বক্ষণ, যা দেখে সত্যিই মনটা ভরে গেছে।

৪ দশমিক ৩৬ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত বাসাবো খেলার মাঠটি সম্প্রতি ছয় কোটি ৬১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন করে ডিএসসিসি। মাঠটির নতুন নাম দেয়া হয়েছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আলাউদ্দিন পার্ক’। নবরূপে সাজানো এই পার্কের মাঠজুড়ে লাগানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা বারমুডা প্রজাতির চোখজুড়ানো সবুজ ঘাস। যা দূর থেকেই পথচারীদের আকৃষ্ট করে। প্রজাপতিকে আকৃষ্ট করে এমন ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে চারপাশে। বানানো হয়েছে চোখ শীতল করা নয়টি ফোয়ারা।

basabo-02.jpg

রাখা হয়েছে শিশু-কিশোর ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য খেলাধুলা এবং বয়স্কদের হাঁটার ব্যবস্থা। পার্কটির চারদিকে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। রয়েছে দর্শক গ্যালারি, বিশ্রামাগার, ফুটবল ও ক্রিকেট অনুশীলনের ব্যবস্থাও। আধুনিক শৌচাগারের পাশাপাশি অতিবৃষ্টি হলে যেন পানি নিষ্কাশন করা যায়, রয়েছে সেই ব্যবস্থাও।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫৬ সালের দিকে স্থানীয়রা মাঠটি তৈরি করেন। এতদিন ধরে মাঠটি অযত্নেই পড়ে ছিল। ঢাকা মহানগরীকে তিলোত্তমা শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ডিএসসিসি ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্প হাতে নিলে এই মাঠও ওই প্রকল্পের আওতায় আসে। সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ করে গত ২৬ নভেম্বর নতুন রূপ নেয়া পার্কটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। উদ্বোধনের পর থেকে এটি এলাকাবাসীর বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

basabo-02.jpg

এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এক সময় মাঠটি অযত্নে-অবহেলায় ছিল। কিন্তু ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের উদ্যোগে মাঠটি পুরোপুরি বদলে গেছে। এটি এখন যে মনোরম রূপ পেয়েছে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। মাঠটি সব বয়সীদের ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারার মাধ্যমে সবুজ ঘাসে পানি ছিটানো হচ্ছে। আমাদের বাচ্চারা এখানে খেলাধুলা করে, দৌড়ায়। যা দেখে আমাদের নিজেদেরই অন্য রকম আনন্দ লাগে। মাঠটির পরিবেশ দেখতেও অনেক সুন্দর। এটি ঘিরে আশপাশের পরিবেশও অনেক বদলে গেছে। একটি মাঠের যে এত সুন্দর রূপ হতে পারে তা সাঈদ খোকন আমাদের এলাকাবাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন।

জানা গেছে, ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯টি পার্ক আর ১২টি খেলার মাঠ আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প হাতে নেন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে নকশা পরিবর্তনের কারণে ব্যয় দাঁড়ায় এক হাজার ৭০০ কোটি ১৯ লাখ টাকায়। এই বরাদ্দের ৭০ শতাংশ দেয় সরকার, বাকি ৩০ শতাংশ বহন করে ডিএসসিসি।

basabo-02.jpg

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ডিএসসিসি এলাকায় মাঠ ও পার্কের উন্নয়নে গ্রহণ করা ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ৩১টি মাঠ ও পার্কের নকশা প্রণয়ন করেন রফিক আযমের নেতৃত্বে ৭০ জন স্থপতি। মাঠগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইতোমধ্যে সর্বসাধারণের জন্য খুলেও দেয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি মাঠ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। মেয়র সাঈদ খোকনের মেয়াদকালেই (আগামী মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত) এ প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হচ্ছে।

প্রকল্পভুক্ত পার্ক ও মাঠগুলোর মধ্যে বাসাবো মাঠ ছাড়াও রয়েছে মতিঝিলের সিরাজ উদ্দৌলা পার্ক, বংশালের ত্রিকোণাকার পার্ক, কলাবাগান খেলার মাঠ, গোলাপবাগ খেলার মাঠ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্ক, মালিটোলা পার্ক, সিক্কাটুলী পার্ক, মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পার্ক, আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক, জোড়পুকুর পার্ক, শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ, রসুলবাগ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, বাহাদুরশাহ পার্ক, গজমহল পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, বাংলাদেশ মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, পান্থকুঞ্জ পার্ক, আজিমপুর শিশুপার্ক, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম, সামসাবাদ খেলার মাঠ, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বালুরঘাট খেলার মাঠ, ওসমানী উদ্যান বা গোসস্যা নিবারণী পার্ক, বকশীবাজার পার্ক ও বশির উদ্দিন পার্ক।

basabo-02.jpg

প্রকল্পের আওতায় মাঠ বা পার্কগুলোতে যা থাকছে

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় মাঠ বা পার্কগুলোতে শহীদ আলাউদ্দিন পার্কের মতোই সুযোগ-সুবিধা থাকছে। কোনো কোনোটিতে এলইডি লাইটিং, কফি হাউজ, ফুড কোর্ট, কার পার্কিং, জাদুঘর, পাঠাগার, গ্রিন জোন, পাবলিক প্লাজা, লেডিস কর্নার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, হাতিরঝিলের মতো জলাধারের পাশাপাশি সবুজ বাগান ও বেষ্টনী। গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের ভাস্কর্যও থাকছে। ফলে পরিবার নিয়ে বেড়ানোর জন্য মনোরম জায়গা হয়ে উঠছে একেকটি মাঠ ও পার্ক।

basabo-02.jpg

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন জাগো নিউজকে বলেন, বাসাবো খেলার মাঠটি সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য স্থানীয়দের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। আমাদের ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠগুলোর উন্নয়ন করছি। এ প্রকল্পের আওতায় আমরা মাঠ ও পার্কের দৃশ্য বদলে দিয়েছি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এসব পার্ক ও খেলার মাঠগুলো আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে। পার্কে লাগানো ঘাসগুলো বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে। আমরা কাজ করছি, ঢাকা শহরকে পার্ক-মাঠের নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে। এরই মধ্যে অনেক মাঠের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

basabo-02.jpg

‘বাসাবো মাঠটি বিশ্বমানের হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এতে শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরাও খেলতে পারবে। অতিবৃষ্টি হলেও মাঠটিতে পানি জমবে না। সেজন্য তা সারা বছর এলাকাবাসীর ঘোরাঘুরি ও আনন্দ-আড্ডার কেন্দ্র হয়ে থাকবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *