বছরে পানিতে ডুবে মারা যায় ১৯ হাজার শিশু
দেশে পানিতে ডুবে মৃত্যুহার অনেক বেড়েছে। বাড়ির কাছে পুকুর ও জলাশয়ে শিশুদের খেলতে দেয়া এবং অভিভাবকের অসচেতনতা এই মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এ ছাড়াও নৌ-দুর্ঘটনায় বড়রা শিশুদের রেখেই নদীবক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কাটতে থাকেন। শিশুরা নৌযানেই মরে পড়ে থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে দেশে প্রতি বছর ১৯ হাজারেরও বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। বর্ষা মৌসুমে পনিতে ডুবে মৃত্যুহার অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। আরেক জরিপে বলা হয় দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন শিশু মারা যায়। যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এদের মধ্যে পাঁচ বছর বয়সের নিচে শিশু মারা যায় গড়ে ৩০ জন। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে বলা হয় প্রতি বছর পানিতে ডুবে মারা যায় ১৪ হাজার শিশু। যাদের বয়স ২ থেকে ১৭ বছর। সম্প্রতি বাংলাদেশ হেলথ এ্যান্ড ইনজুরি সার্ভের এক রিপোর্টে বলা হয় ১ থেকে ১৮ বছর বয়সী যত শিশুর আঘাতজনিত কারণে মৃত্যু হয় তার ৩৭ শতাংশের মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ ও রিপোর্টে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যার তারতম্য ঘটলেও একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় দেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার বেড়েছে। যা প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।
এই বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মী জানালেন গণমাধ্যমে পানিতে ডুবে মৃত্যুর যে সংখ্যা প্রকাশিত হয় বাস্তবে তারচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়। নিভৃত প্রত্যন্ত এলাকার এই খবর অনেক সময় বাদ পড়ে যায়। একটি সূত্র জানায়, পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে বাংলাদেশ জাতিসংঘে বড় ভূমিকা রেখেছে। গত বছর (২০২১) সালের ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে ঐতিহাসিক রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়। যেখানে প্রতি বছর ২৫ জুলাই বিশ্বে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে একটি দিবস ঘোষণা করা হয়। রেজ্যুলেশন উত্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থানীয় প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা। গত বছর (২০২১) বিশ্বে প্রথম এই দিবস পালিত হয়।
এদিকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, সারা দেশে শিশুদের সাঁতার শেখানোর একটি কর্মসূচী গত বছর জুন মাসে শেষ হয়েছে। ওই সময়ে ২ লাখ ৯৮ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানো হয়। আরেকটি কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। এই কর্মসূচী বাস্তবায়িত হলে আরও ২ লাখ শিশুকে সাঁতার শিখতে পারবে। সরকারী এই কর্মসূচীর পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারী সংস্থা রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও সিরাজগঞ্জ জেলায় শিশুদের সাঁতার শেখানোর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে।
গ্লোবাল হেলথ এ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয় বিশ্বে পানিতে ডুবে যত মৃত্যু হয় তার প্রথম অবস্থানে আছে আফ্রিকা। বাংলাদেশের অবস্থান ২২ তম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) পানিতে ডুবে মৃত্যুহার কমাতে দশটি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। যার তিনটি পরামর্শ বাংলাদেশের সাফল্যের অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। এর মধ্যে অন্যতম হলো পুকুড়পাড় বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে সাঁতার শেখানো। শিশুকে পুকুর ও জলাশয়ের আশপাশে খেলতে না দেয়া এবং অভিভাবক ও পাড়া পড়শীর সচেতনতা।