দেশে করোনায় আরো ১০ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৩৯০

বাংলাদেশে নতুন করে আরও ৩৯০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৭৭২ জনে। এছাড়া করোনা আকান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ১০ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২০ জনে।

বুধবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন সংবাদ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

বুধবার (২২ এপ্রিল) সকাল ৯টা পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪১ জন। এছাড়া এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ২৫ লাখ ৫৭ হাজার ১৮১ জনের শরীরে।

আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৪৪ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬ জন। এদের মধ্যে ১৬ লাখ ৩১ হাজার ৬১০ জনের জনের শরীরে মৃদু সংক্রমণ থাকলেও ৫৭ হাজার ২৪৫ জনের অবস্থা গুরুতর।

ভাইরাসটির আক্রমণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের। সেখানে ৮ লাখ ১৯ হাজার ১৬৪ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৪৫ হাজার ৩৪০ জন।

মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরে অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ২৮২ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫৭ জন।

ভিয়েতনামে করোনায় মৃত্যু নেই, কোন কৌশলে সফল তারা?

উন্নয়নশীল দেশ ভিয়েতনামের বিশাল সীমান্তজুড়ে রয়েছে চীন। করোনার জন্মভূমি সেই চীন হলেও প্রায় দশকোটি জনসংখ্যা নিয়ে অনেকটাই নিরাপদে রয়েছে ভিয়েতনাম। দেশটিতে এ পর্যন্ত ২৬৮ জন করোনায় আক্রন্ত হলেও কোনো মৃত্যু নেই। এমনকি ইতিমধ্যে ১৪০ জন পুরোপুরি সুস্থও হয়ে উঠেছেন। করোনায় বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, উন্নত দেশের হাসপাতলগুলো রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তখন ভিয়েতনাম কিভাবে কোন মৃত্যু ছাড়াই এখনও সফল? এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বিশ্লেষকরা পেয়েছেন তিনটি গুরুত্বপূর্ন কৌশল।

কি সেই কৌশল? জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটিতে দেহের তাপমাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিমানবন্দরে এ পরীক্ষা থেকে কাউকে বাদ দেয়া হয়নি। একইসঙ্গে তাদের কয়েকমাসের স্বাস্থ্যগত তথ্যও যাচাই করা হতো। কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা। আর তাপমাত্রা ৩৮ সেলসিয়াসের বেশি হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হতো। এছাড়া তার করণীয় কি তা ঠিক করে দিতেন চিকিৎসকরা।

বর্তমানে দেশটির কোন বড় শহর বা প্রদেশ, একইসঙ্গে কোনো প্রতিষ্ঠান ভবনে ঢুকতে হলে স্ক্রিনিং ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সেরেই ঢুকতে হয়। সব শহরেই করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সবাইকে বাধ্যতামুলক এ পরীক্ষা করতে হচ্ছে। কারো করোনা ধরা পড়লে ওই এলাকা পুরোটাই লকডাউন করে দেয়া হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি থেকেই ভিয়েতনামে কোয়ারেন্টিন ও লকডাউন মেনে চলা হচ্ছে। দেশটিতে গত ৫ মার্চ থেকে নিজেদের উদ্ভাবিত তিন ধরণের করোনার কিট পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো জনসাধারণ যে কোনে স্থান থেকে ২৫ ডলারে কিনে নিয়ে নিজেরাই পরীক্ষা করতে পারে। এতে ফলাফল পাওয়া যায় মাত্র ৯০ মিনিটে। এর ফলে দেশটিতে ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষা সম্ভব হয় এবং সরকারও সে হিসেবে ব্যবস্থা নিতে পেরেছে।

সফলতার ক্ষেত্রে আরেকটি বড় ভূমিকা রেখেছে জনগণের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ। জানুয়ারি থেকেই ভিয়েতনাম সরকার জনগণের মাঝে করোনা নিয়ে প্রচারণা শুরু করে। জানিয়ে দেয়া হয়, কিভাবে সচেতন থাকতে হবে, করোনা হলে কি করতে হবে, এবং কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে। সেই সঙ্গে কিভাবে একে অন্যের ক্ষতি না করে থাকা যায় সেটিও জনগণকে নিশ্চিত করতে বলা হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রাদেশিক গভর্ণররাও মোবাইল ফোন ও প্রযুক্তির বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে এ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কারো করোনা ধরা পড়লে তা প্রচার করে দেয়া হচ্ছে, যাতে অন্যরা সচেতন হতে পারে। একইসঙ্গে কেউ তথ্য গোপন করলে বা আইন লংঘন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দেশটির হাসপাতালগুলোতেও করোনা চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। কোন রোগী আসলে তার চিকিৎসায় তরিত ব্যবস্থা নেয়া হয়। মোটা দাগে তিনটি কৌশল অবলম্বন করেই করোনায় মৃত্যু শূন্য রাখতে পেরেছে দেশটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *