ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল শিশু রোগীর আশ্রয়স্থল
তেমন বড় কোনো শিল্প কলকারখানা গড়ে না ওঠায় দেশের উত্তরের কৃষিনির্ভর জেলাগুলো এখনো অনুন্যত রয়ে গেছে। এ জেলাগুলোর তালিকায় ঠাকুরগাঁও অন্যতম। তবে শিল্পক্ষেত্রে উন্নত জেলার তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে এগিয়েছে অনেক। যার প্রমাণ মেলে ঠাকুরগাঁওসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলার চিকিৎসা নিতে আসা শিশু রোগীদের দেখে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডেই ভর্তি রয়েছে ১৮০/২০০ জন শিশু রোগী। দিনে গরম ও রাতে ঠাণ্ডা এমন আবহাওয়ায় বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। শয্যা সংকটে পড়ে অভিভাবকরা অধিকাংশ শিশু রোগী নিয়ে অবস্থান করছেন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দা কিংবা মেঝেতে। ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগীর চাপে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রোগীর স্বজনরা ছুটছেন সেবা নিতে। জেলার পাঁচ উপজেলাসহ আশপাশের জেলা পঞ্চগড়, নিলফামারী ও দিনাজপুরের কিছু অংশের রোগীরা সেবা নিতে আসায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
পঞ্চগড়, নিলফামারী ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে সন্তানের চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শিশুর অভিভাবকরা জানান, রংপুর বা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তুলনায় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল কাছে হওয়ায় আমাদের এখানে ছুটে আসা। চিকিৎসার মান ভালো হওয়ায় শয্যা সংকটে পড়েও মেঝে কিংবা বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালে পা ফেলার জায়গা নেই। হাসপাতালটিতে শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি লোকবল বাড়ানোও জরুরি হয়ে পড়েছে। না হলে কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন রোগীরা।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শাহজাহান নেওয়াজ রোগীর চাপের কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নতি হলেও জনবল দেওয়া হয়নি। ফলে অতিরিক্ত চাপে পড়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেবার মান বাড়াতে হলে জনবল প্রয়োজন। তারপরও সাধ্যমত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুদের বাইরে কম বের হতে দিতে হবে। শরীর ঘেমে গেলে পরনের কাপড় পরিবর্তন করে দিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও রোগমুক্ত থাকবে।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের ত্বত্তাবধায়ক ডা. নুরুজ্জামান জুয়েল জানান, শীতের শুরুতে এবং গরমের শুরুতে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের এখানে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। তাছাড়া হাসপাতালে শিশু রোগীর সেবা মানসম্মত হওয়ায় আশপাশের জেলার অনেক এলাকার অভিভাবক তাদের শিশুদের নিয়ে এখানে আসছেন। এ কারণে হাসপাতালে সব সময় শিশু রোগীর চাপ থেকেই যায়।
এখানে প্রতিদিনই অভিজ্ঞ শিশু ডাক্তার রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন এবং শিশু ওয়ার্ডে প্রতি শিফটে তিনজন করে নার্স প্রতিনিয়ত অসুস্থ শিশুতেদর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। এতে অতিরিক্ত রোগীদের গাদাগাদি করেই চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে আমাদের।