জামালপুরে নার্স ও দুই বছরের শিশু করোনায় আক্রান্ত
জামালপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখতেন এমন একজন সরকারি চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এবার একই হাসপতালের প্যাথলজিস্টের দুই বছরের কন্যা শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে জামালপুর পিসিআর ল্যাব থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে ওই শিশু এবং জামালপুর সদর হাসপাতালের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের করোনা পজিটিভ আসে। নতুন এই দুজনসহ এ পর্যন্ত জেলায় ১৭০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদরের ইউএইচএফপিও ডা. লুৎফর রহমান ।
সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ৯৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে দুজনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসে। বাকিদের সবার করোনা নেগেটিভ আসে। নতুন আক্রান্ত দুজনই জামালপুর শহরের বাসিন্দা। গত সোমবার তাদের করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
এ পর্যন্ত জেলায় সবচেয়ে কম বয়সে করোনায় আক্রান্ত দুই বছর বয়সের ওই শিশুটি জামালপুর শহরের ছনকান্দা এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন রিলায়েন্স হাসপাতালের একজন প্যাথলজিস্টের কন্যা। প্যাথলজিস্ট তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হাসপাতালটির পাঁচতলায় বসবাস করেন। এর আগে গত রবিবার এই হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিসরত শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের অর্থপেডিক বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার একজন চিকিৎসকের (৫২) করোনা পজিটিভ আসে। করোনার উপসর্গের পাশাপাশি তার ডায়াবেটিস রয়েছে। গতকাল শুক্রবার তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
সূত্রটি আরো জানায়, ওই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর রিলায়েন্স হাসপাতালের ২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলে তাদের মধ্যে শিশুটির করোনা পজিটিভ আসে। নমুনা দেওয়ার আগ পর্যন্ত ওই চিকিৎসক সেখানে নিয়মিত রোগী দেখতেন এবং ওই শিশুর বাসায় যাতায়াতের কারণে তারই সংস্পর্শে শিশুটি আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে বলে শিশুটির বাবা-মা, ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং জেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। শিশুটির উপসর্গ স্বাভাবিক থাকায় তাকে হাসপাতালটির পাঁচতলায় তার মায়ের সাথে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
এছাড়া করোনায় আক্রান্ত জামালপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সকেও (৪) জামালপুর শহরের মুকুন্দবাড়ী কলাবাগান এলাকায় তার ভাড়া বাসায় আইসোলেশনে থাকতে এবং তার পরিবারের সদস্যদের আলাদা কক্ষে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তারও উপসর্গ স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন সদরের ইউএইচএফপিও।
জামালপুর সদরের ইউএইচএফপিও ডা. মো. লুৎফর রহমান জানান, রিল্যায়েন্স হাসপাতালের ওই শিশুটির বাবা-মাসহ ২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। হাসপাতালটির প্যাথলজিস্টের দুই বছরের মেয়েটির করোনা পজিটিভ আসে এবং বাকিদের সবার নেগেটিভ আসে। নেগেটিভ শনাক্ত হওয়া সকল স্বাস্থ্যকর্মীরা শুক্রবার রাতের মধ্যে হাসপাতাল ত্যাগ করে বাড়িতে চলে গেছেন। একই সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী ভর্তিসহ তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখায় হাসপাতালটি আর লকডাউনের কোনো প্রয়োজন পড়ছে না। তবে হাসপাতালের পাঁচতলায় শিশুটির বাবা এক কক্ষে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন এবং অন্য একটি কক্ষে শিশুটি তার মায়ের সাথে আইসোলেশনে থাকবে।
তিনি আরো জানান, শিশুটিকে সুস্থ করে তুলতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। করোনায় আক্রান্ত সদর হাসপাতালের স্টাফ নার্সকে তার বাসায় আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে। শনিবার সকালে ওই নার্সের পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হবে।