জাপানি দুই শিশু: সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ ১৩ ফেব্রুয়ারি

আলোচিত জাপানি দুই শিশুর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত জানা যাবে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি।

দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে জাপানি মায়ের করা আপিলের শুনানি শেষে সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন পাচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আদেশের জন্য এই দিন ধার্য করেন।

আদালতে মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, আহসানুল করিম ও শিশির মনির। আর বাবার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল, ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অনির আর হক।

এর আগে দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে ঢাকায় এসে গত ১৯ আগস্ট জাপানি মা নাকানো এরিকোর করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট কয়েক দফায় নির্দেশনা দেন। একপর্যায়ে দুই মেয়েকে তাদের বাবা ইমরান শরীফের হেফাজত থেকে সিআইডি উদ্ধার করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে।

পরে দুই পক্ষের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ইমরান শরীফের গুলশানের ভাড়া করা ফ্লাটে দুই শিশুকে নিয়ে বাবা-মা কিছুদিন একসাথে থাকে। এরপর হাইকোর্ট দুই শিশুর সাথে তাদের বাবা-মাকে থাকার সময় ভাগ করে দিয়ে কয়েকবার নির্দেশ দেন। এছাড়া হাইকোর্ট দু’পক্ষকেই কয়েকবার সমঝোতায় বসার সুযোগ দেন।

কিন্তু সমঝোতা না হওয়ার পরিপ্রেক্ষাপটে গত বছরের ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে করা রিটটি (কন্টিনিউয়াস ম্যান্ডামাস) বিচারিক বিবেচনায় চলমান থাকবে বলে রায় দেন।

সেই রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘‘আমরা দুই পক্ষের আইনজীবীকেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাবো কোর্টকে সহযোগিতা করার জন্য। এধরনের একটা কন্টেস্টিং মামলায় দুই পক্ষেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ল’ উপস্থাপন করেছেন, যাতে আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি এবং যা আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে খুব সহায়ক হয়েছে। তবে হৃদয় বিদারক কথা হচ্ছে, আমরা আজ যে রায় বা আদেশ দেই না কেন, ভিকটিম কোনো না কোনো পক্ষ তো হবেন। তবে তারচেয়ে বেশি ভিকটিম হবেন এই দুই শিশু সন্তান।

তবে আমরা আশা করবো যে, এই বাবা-মা ভবিষ্যতে যেন আরো গঠনমূলক এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করেন এবং সেক্ষত্রে তারা যাতে পদক্ষেপ নিতে পারেন আমরা সে সুযোগ রেখেই আদেশটি দিচ্ছি।আরেকটি কথা বলতে হবে যে, আমরা আপনাদের সিদ্ধান্ত এবং যুক্তি সবকিছুই যতটুকু সম্ভব বিবেচনা করেছি। এসব বিবেচনা করতে গিয়ে আমরা শিশু দুটির সাথে সর্বমোট ৩ বার কথা বলেছি। আমরা আমাদের বিবেচনায় বাচ্চাদের বর্তমান পর্যায়ে কল্যাণের জন্য যে ধরনের আদেশ প্রদান করা সমীচীন, সেভাবেই আদেশ দিচ্ছি।’’

এরপর হাইকোর্ট তার রায়ে বলেন, ‘যেহেতু মা জাপানি নাগরিক, সেখানে তার বসবাস ও কর্মস্থল সে কারণে তিনি তার সুবিধামত সময়ে বাংলাদেশে এসে শিশুদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। এক্ষেত্রে বছরে তিন বার বাংলাদেশে তার যাওয়া আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের যাবতীয় খরচ শিশু দুটির বাবাকে বহন করত হবে। তবে এর চেয়ে অতিরিক্ত যাওয়া-আসা বা বাংলাদেশে অবস্থানের ক্ষেত্রে খরচ মা নিজে বহন করবেন। এছাড়া বাবা মাসে কমপক্ষে দুই বার শিশু সন্তানদেরকে ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবেন।’

সেই রায়ে গত কয়েক মাস বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত বাবদ মাকে ১০ লাখ টাকা সাত দিনের মধ্যে দিতে শিশুদের বাবার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে এই শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখতে এবং প্রতি তিন মাস পর পর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রতিবেদন দিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। আর জাপানে থাকা আরেক মেয়েকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে বায়া ইমরান শরীফের করা রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে মা নাকানো এরিকো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি আপিল বিভাগ দুই শিশুকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দেন। তবে বাবা ইমরান শরীফকে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯ টার মধ্যে শিশুদের সাথে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়।

অবশেষে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানি শেষে রায়ের জন্য আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন সর্বোচ্চ আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *