জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে শিশু অধিকারের বিষয় হিসেবে বিবেচনায় নিতে জাতীয় নেতাদের প্রতি বাংলাদেশি শিশুদের আহ্বান

জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের আগে – যা ৩১ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে শুরু হবে – বাংলাদেশি শিশুরা জাতীয় নেতাদের প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে একটি শিশু অধিকার বিষয় হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। শিশুরা জরুরী পদক্ষেপের প্রয়োজন তুলে ধরে জলবায়ু সংকটের সমাধান খুঁজতে শিশুদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করার জন্য নীতিনির্ধারকদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে আহ্বান জানায়।

বাংলাদেশি শিশুদের এই আহ্বানগুলো তাদের তৈরি একটি জলবায়ু ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে একদল শিশু পরিবেশবন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী জনাব শাহাব উদ্দিনবাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দের কাছে আজ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে একটি অনুষ্ঠানে হস্তান্তর করেছে।

সরকারের প্রতিনিধিদলের কাছে শিশুদের স্পষ্ট বার্তাটি ছিল: “যখন গ্লাসগোতে যাবেন, আমাদের বার্তাটি নিয়ে যাবেন। জলবায়ু পরিবর্তন হলো শিশু অধিকারের একটি বিষয়।”

জলবায়ু ঘোষণাটি প্রণয়ন করা হয়েছিল ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রথম শিশু জলবায়ু সম্মেলনে ওই জলবায়ু সম্মেলনের প্রক্রিয়ায় ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ) পরিচালিত জেনারেশন পার্লামেন্ট উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১০ লাখের বেশি শিশুকে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল।

বাংলাদেশি শিশুদের জলবায়ু ঘোষণায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করাদূষণ  গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনাশিক্ষাপ্রশিক্ষণ  সবুজ (পরিবেশবান্ধবঅর্থনীতিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিএবং শিশুদের ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলে এমন নীতি  সিদ্ধান্ত প্রণয়নের সময় তাদের বক্তব্যগুলো শোনা।

২০২০ সালের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শিশুদের পক্ষে ঘোষণাটি হস্তান্তর করে ১৩ বছর বয়সী কাবা কওশিন আরিশা। আরিশা বলে, “জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের টিকে থাকাকল্যাণ  ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা আপনাদের অনুরোধ করছিএদেশের শিশুদের জন্য এগিয়ে আসুন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

আমরা যদি এখনই পদক্ষেপ না নিই এবং সম্মিলিতভাবে কাজ না করি তাহলে আমরা এমন একটি জায়গায় পৌঁছে যাব যেখান থেকে আর ফেরা যাবে না। আপনাদের এবং কপ২৬ এর প্রতি এটাই আমাদের বার্তা,” আরিশা বলে

জলবায়ু ঘোষণা হস্তান্তর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “এই ঘোষণার পেছনে যে ১০ লাখ শিশু একত্রিত হয়েছে তাদের আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাছাড়া আমাদের – শিশু ও আইন প্রণেতা – এক জায়গায় আনার জন্য ইউনিসেফকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের এই শিশুদের কথা শুনেই আমরা সবার জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারি।”

কপ২৬ এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে থাকছেন পরিবেশবন  জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার শিশুদের অধিকার রক্ষা এবং শিশু অধিকারের একটি বিষয় হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে মোকাবেলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা শিশুদের নিয়েই শিশুদের জন্য একটি উন্নতনিরাপদ  পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে কাজ চালিয়ে যাব।” 

বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশগুলোর একটি হলেও এটা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। ইউনিসেফের প্রথমবারের মতো তৈরি করা শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচকে (চিলড্রেন ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সসিসিআরআই ২০২১দেখা গেছেজলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের মধ্যে বাংলাদেশের শিশুরা রয়েছে। শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি  প্রভাবের দিক দিয়ে বৈশ্বিক এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১৫তম।

ইউনিসেফের ধারণাবাংলাদেশে প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একটি শিশুপ্রায় দুই কোটি শিশুপ্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত বহন করে চলেছে। চরম আবহাওয়াবন্যানদী ভাঙনসমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সংঘটিত অন্যান্য পরিবেশগত সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। এর ফলে অনেকের ঠাঁই হচ্ছে শহরের বস্তিগুলোতেতাদের জীবন  ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ছে। লাখ লাখ শিশু বঞ্চনামূলক শিশু শ্রমশিশুবিবাহ  পাচারের শিকার হচ্ছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডোন ইয়েট বলেন, “জলবায়ু সংকটের জন্য বাংলাদেশের শিশুরা দায়ী নয়। কিন্তু তারাই এর সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে।

তিনি বলেন, “ বিষয়ে সম্মিলিত সংহতির জন্য বাংলাদেশের শিশুরা যে আহ্বান জানিয়েছেতার পাশে রয়েছে ইউনিসেফ। শিশুদের প্রয়োজনগুলো অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে করণীয় বিষয়াবলীর কেন্দ্রে থাকতে হবে।

সমাজে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার সক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে শিশুদের জন্য জলবায়ু সহনশীল শিক্ষাস্বাস্থ্যপুষ্টিপানিপয়ঃনিষ্কাশন  পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতার সেবা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ। 

বাংলাদেশের শিশুরা যাতে জাতীয়  আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের আইন প্রণেতাদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য নিয়মিত সুযোগ তৈরি করে দেয় ইউনিসেফ। একটি বাসযোগ্য পৃথিবী তাদের অধিকার  বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শিশুরা আওয়াজ তোলায় তাদের বক্তব্য তুলে ধরতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউনিসেফ।

অনুষ্ঠানে শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাস এবং  বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924