চট্টগ্রাম বিভাগের চার জেলায় একজনের মৃত্যু দুই চিকিৎসকসহ আক্রান্ত ১৭

চট্টগ্রাম বিভাগের চার জেলায় বুধবার (১৫ এপ্রিল) পাওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী নতুন করে ১৭ ব্যক্তি করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার নমুনা পাঠানো হলে তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন বলে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) ও ঢাকার আইইডিসিআর থেকে এসব নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া গেছে। বিভাগের জেলাগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলায় দুজন চিকিৎসক এবং কুমিল্লাতেই একজন এক্সরে টেকনোলজিস্ট করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী চিকিৎসক দুদিন আগে করোনা পজিটিভ প্রমাণিত হওয়ায় ময়মনসিংহে স্বামীর কাছে চলে গিয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চট্টগ্রামে আরও ৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বুধবার  (১৫ এপ্রিল) ফৌজদার হাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) নমুনা পরীক্ষায় তাদের শরীরে করোনার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে।চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি  এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শনাক্ত হওয়া ৫ জনের মধ্যে এরইমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়ার পর তার নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজেটিভ এসেছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।    এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ জন। এর আগে গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের দামপাড়ায় ৬৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এরপর ৫ এপ্রিল ওই ব্যক্তির ২৫ বছর বয়সী ছেলে, গত ৮ এপ্রিল আরও তিন জন, ১০ এপ্রিল দুইজন, ১১ এপ্রিল ২জন, ১৩ এপ্রিল ৫ জন, ১৪ এপ্রিল ১১ জনের শরীরে করোনা পাওয়া যায়। এদের ৪জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছে।

সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সোমবার বিআইটিআইডিতে ১০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ৬জনের শরীরে করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ৫ জন চট্টগ্রামের। অন্যজন নোয়াখালী জেলার।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের ৫ জনের মধ্যে নগরীর দামপাড়া এলাকার ২জন, আনোয়ারার একজন, পটিয়ার একজন, আরেকজন নগরীর নিমতলা এলাকার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় ২৮ বছর বয়সী এক তরুণী ও ৫৫ বছর বয়সী আরেক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে তাদের নমুনার পজেটিভ প্রতিবেদন পৌঁছায়। আক্রান্ত দুজনকে চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুর রহমান বলেন, কুমিল্লা ইপিজেডে কাজ করা এক তরুণী গত কয়েকদিন আগে আখাউড়া উপজেলায় আমোদাবাদ গ্রামে দাদার বাড়িতে চলে আসেন। একই উপজেলার চর-নারায়ণপুর গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির ছেলে-মেয়েও কুমিল্লা ইপিজেডে কাজ করতো।

করেনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবরোধে ইপিজেড বন্ধ করার কারণে ওই ব্যক্তির ছেলে মেয়েরাও বাবার বাড়িতে চলে আসে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে চিকিৎসকের একটি দল তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠান। বুধবার বিকেলে দুজনের নমুনায় পজেটিভ প্রতিবেদন আসে। তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার জেলায় নতুন করে আটজনের নমুনার প্রতিবেদন এসেছে। দুটি পজেটিভ ও বাকিদের নেগেটিভ প্রতিবেদন এসেছে।

এদিকে বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ প্রাতিষ্ঠানিক সরকারি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে কর্মরত যে নারী চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত তিনি আখাউড়ার পৌর এলাকার দেবগ্রামের শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। সেখান থেকে গিয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করতেন। কয়েকদিন আগে ওই নারী চিকিৎসকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা দিয়েই ওই চিকিৎসক স্বামীর কাছে ময়মনসিংহে চলে যান। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে রয়েছেন।

এছাড়া গত ৮ এপ্রিল রাত আটটার দিকে নাসিরনগরে অতিমাত্রায় জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়ার পথে ৩৫ বছর বয়সী এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর মৃত্যু হয়। প্রবাসীর মৃত্যুর পর তার পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির সকলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। মঙ্গলবার প্রবাসীর স্ত্রীর শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়ার প্রতিবেদনটি ঢাকা থেকে জেলায় পাঠানো হয়। তাকেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বক্ষব্যধি হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, বুধবার জেলায় দুইজন ও গত মঙ্গলবার আরও দুইজনের করোনাভাইরাসের পজেটিভ প্রতিবেদন আমাদের কাছে পৌঁছেছে। তারমধ্যে একজন চিকিৎসকসহ নারী তিনজন।

তিনি বলেন, জেলায় এখন পর্যন্ত ১৯৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, জেলায় এখন ১৩ জনের পজেটিভ প্রতিবেদন পেয়েছি। তার মধ্যে ৩জন মারা গেছেন।

কুমিল্লায় নতুন করে আরও ১০জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চিকিৎসক ও নারী রয়েছে। এ নিয়ে কুমিল্লায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২৬ জনে পৌঁছেছে। একদিনে আক্রান্তের মধ্যে জেলার বুড়িচংয়ে একজন, তিতাসে একজন, হোমনায় একজন, দাউদকান্দিতে তিনজন, চান্দিনায় তিনজন ও চৌদ্দগ্রামে একজন রয়েছেন।

কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১৫ এপ্রিল) ৩২ টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে নতুন ১০ জনের পজেটিভ হলেও ২২ টি নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান জানান, চান্দিনায় জননী মেডিক্যাল সেন্টারের এমবিবিএস পাস করা এক তরুণ চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার দত্ত ডায়গনস্টিক সেন্টারের এক্সরে টেকনোলজিস্ট এবং মহারংয়ে একজন আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি গত জানুয়ারিতে সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন।

তিনি জানান, এছাড়াও দাউদকান্দির বিটেশ্বর ইউনিয়নের তিনপাড়া, বরকোটা ও পাঁচগাছিয়ার শ্রী রায়েরচর গ্রামে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন নতুন করে। এদের মধ্যে দুইজন নারী ও একজন পুরুষ।

সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলা সমন্বয়ক ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী জানান, নতুন করে জেলার চৌদ্দগ্রামের পৌর এলাকার চান্দিশকড়ায়, বরুড়ার খোশবাস ইউনিয়নের কেমতলী গ্রামে এবং  হোমনায় একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924