খেলার মাঠের অভাবে ত্রিশাল পৌরসভার শিশুদের বিকাশ ব্যাহত

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নয়টি ওয়ার্ড প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত। এ ওয়ার্ডগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। ত্রিশাল পৌরসভার বেশিরভাগ গলি-সড়ক সরু ও ঘনবসতিপূর্ণ। এ এলাকায় শিশু-কিশোরদের জন্য নেই কোনো খেলার মাঠ ও পার্ক। এতে ব্যহত হচেচ্ছ শিশু-কিশোরদের শারিরীক-মানসিক বিকাশ। এদিকে,বয়স্কদের জন্য নেই ব্যায়ামাগার বা হাঁটার কোনো খোলা জায়গা।

অন্যদিকে খেলাধুলা ও বিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ শিশু-কিশোর সময় কাটানোর জন্য বেছে নিচ্ছে ইন্টারনেট। আসক্ত হচ্ছে মাদকে। এছাড়া অনেক শিশু-কিশোর এলাকার সড়কগুলোতে খেলাধুলা করতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

শিশু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশু অধিকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ। যা শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ ও শারীরিক গঠনে অন্যতম ভূমিকা রাখে। খেলাধুলা করতে না পারায় একদিকে যেমন শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে তারা ইন্টারনেট ভিত্তিক গেমস ও মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘনবসতিপূর্ণ ত্রিশাল উজানপাড়া, নামাপাড়া, চরপাড়া, গোহাটা, নওধার, দরিরামপুরসহ নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে আশেপাশের এলাকা। বেশির ভাগ এলাকায় নেই কোনো উপযুক্ত খেলার মাঠ ও পার্ক। যা আছে তাও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে, স্থানীয় সরকারি নজরুল একাডেমি ও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি খেলার মাঠ থাকলেও মাঠটিতে বেশির ভাগ সময় ক্লাবভিত্তিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করে। এখানে অন্যদের খেলার সুযোগ নেই।

ত্রিশাল পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, শিশু-কিশোররা উন্মুক্ত স্থান, খেলাধুলা ও বিনোদনের জায়গা না পাওয়ায় ঘরে আবদ্ধ অবস্থায় বেড়ে উঠছে। বয়স্কদের বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের হাঁটা-চলার জন্য নেই কোনো উন্মুক্ত জায়গা।

পৌরসভার স্থানীয় ব্যবসায়ী রেজাউল করিম মাসুম জানান, শুধু শিশু নয়, প্রতিটি মানুষের সুস্থ মন, শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলার মাঠ ও পার্ক অত্যন্ত জরুরি। ত্রিশাল পৌরশহরে নেই কোন পার্ক। একটা পার্ক নির্মাণ হলে কিছুটা বিনোদন ও খোলামেলা হাঁটার জায়গা পাওয় যাবে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক সরকারি জায়গা রয়েছে যা স্থানীয়দের দখলে। সরকারের উচিত সেগুলোও দখলমুক্ত করে শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা।

এ বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মতিউর রহমান পারভেজ জানান, শিশুদের উন্মুক্ত স্থানে খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্তের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

তবে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ত্রিশাল পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। এ পৌরসভায় আমাদের জাতীয় কবির নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের খেলার মাঠ ও ভালো মানের পার্ক থাকলে এই উপজেলাসহ আশেপাশের অঞ্চলের মানুষের বিনোদনের চাহিদা পূর্ণ হবে। এ বিষয়ে আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।

ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান আনিস বলেন, পৌরশহরে খোলা স্থান খুবই কম রয়েছে। যার জন্য খেলার মাঠ ও পার্ক নেই। তবে পৌরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ত্রিশাল কেন্দ্রীয় ইদগাহ সংলগ্ন জায়গায় আমরা খেলার মাঠের জন্য জায়গা নিয়ে সেখানে মানসম্মত খেলার মাঠ তৈরি করতে চেষ্টা করছি। পাশাপাশি বিনোদন ও বড়দের হাঁটার জন্য ত্রিশাল সুতিয়া নদীর পাশে পার্ক ও পার্কের চারপাশে ওয়াকওয়ে করা হবে। সেটিকে বিউটিফিকেশন প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন করা হবে। ফুলের গাছসহ বিভিন্ন গাছ দিয়ে সাজানো হবে। বসার জায়গা করা হবে ও শিশুরা খেলাধুলা করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *