করোনায় মনোসংকটে শিশু
করোনার কারণে দেশে প্রায় ১৪ মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে অনলাইনে ও দূরশিক্ষণ পদ্ধতির পাঠদান চলছে।
অনেক অভিভাবক সন্তানকে খেলার মাঠেও যেতে দিচ্ছেন না। ফলে সহপাঠী-সমবয়সিদের থেকে বিচ্ছিন্ন এসব শিক্ষার্থীর যেমন লেখাপড়া দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে; পাশাপাশি তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের বিকাশও থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের মনোদৈহিক সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শিশুদের সুস্থ রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বর্তমানে রাজধানীসহ সারা দেশে অনেক স্কুল-কলেজে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। কিন্তু দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ পাচ্ছে না। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বিকল্প সান্নিধ্য পেলেও যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এ সুযোগটিও পায় না, সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর মধ্যে বেশি অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
বস্তুত করোনাকালে দেশের প্রায় সব শিশুর মধ্যে নানা পরিবর্তন এসেছে। যাদের বয়স কম তারা স্কুলে যেতে চায়, খেলার মাঠে যেতে চায়, বাইরে বের হতে চায়।
সচ্ছল পরিবারে শিক্ষামূলক বিনোদনের নানা রকম সুবিধা থাকলেও অসচ্ছল পরিবারে তা থাকে না। এ পরিস্থিতিতে অসচ্ছল পরিবারের বাবা-মা ও অভিভাবকের চিন্তা তুলনামূলক বেশি। চলমান পরিস্থিতিতে শিশুদের মনোজগতে নানা ধরনের মানসিক চাপ ও হতাশা তৈরি হতে পারে।
রুটিনে না থাকলে নিয়মানুবর্তিতার সংকটে পড়তে পারে। এসব সমস্যা থেকে ব্যক্তিত্বের সমস্যাও হতে পারে। সেটা থেকে কারও কারও হতাশা চরম আকার ধারণ করে কিনা সংশ্লিষ্টদের এদিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। বর্তমান সংকট মোকবিলায় শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে।
শিশুদের হতাশা দূর করতে ঘরের ভেতরে খেলাধুলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়া অনলাইনে ও টেলিভিশনে শিশুতোষ নানা কর্মসূচি থাকে। তারা সেসবে অংশ নিতে পারে।
ঘরে গল্পের বই পড়ানো যেতে পারে। আগের চেয়ে বড় একটা সুবিধা হচ্ছে, লকডাউনের কারণে অনেক অভিভাবক বা বাবা-মা ঘরে বেশি সময় দিতে পারছেন। এটা ইতিবাচকভাবে শিক্ষার্থীর পেছনে বিনিয়োগ করতে পারেন তারা। করোনার বাস্তবতা মেনে শিশুদের ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে; শিক্ষার পাশাপাশি তাদের উৎফুল্ল রাখার পন্থাও বের করতে হবে।