ছিন্নমূল শিশুরা ‘ড্যান্ডি’র নেশায় আসক্ত

 ছিন্নমূল শিশু। পথই তাদের ঠিকানা। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন পার্ক, বাসস্ট্যান্ড, রাস্তার ধারে, সরকারি স্থাপনার খোলা বারান্দায় বা পথে পথে বেড়ে ওঠা এমন শিশুরা মাদকসেবন, মাদক পরিবহন, ছিঁচকে চুরিসহ অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

ছিন্নমূল শিশুরা ‘ড্যান্ডি’র নেশায় বেশি আসক্ত। অনেকের হাতে টোকাইয়ের ঝুলির পাশাপাশি দেখা মিলবে একটি পলিথিন। কিছুক্ষণ পর পর মুখের সামনে পলিথিনটি ধরে শ্বাস নেয় তারা। পলিথিনের ভেতরে থাকে হলুদ রঙের কিছু বস্তু। এই মাদকের নাম ‘ড্যান্ডি’।

নগরীর লঞ্চঘাট, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড, কাঠালতলা, নথুল্লাবাদ, আমতলা পানির ট্যাংকসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে ড্যান্ডি সেবন করে এ সব শিশু-কিশোররা। মাদকাসক্ত এসব শিশুদের চিকিৎসার জন্য অর্থের বিনিময়ে বেসরকারিভাবে বরিশালে ৫০ আসনের ৫টি ও ১০ আসনের ১টি নিরাময় কেন্দ্র থাকলেও সরকারি কোন নিরাময় কেন্দ্র নেই।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) ও ইউনিসেফের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগে প্রায় ৯ হাজার ৭৭১ জন পথশিশু বা ছিন্নমূল শিশু রয়েছে। যারা অধিকাংশই মাদকাসক্ত। জুতা কিংবা ফোমে ব্যবহৃত সলিউশন (আঠা) পলিথিনে ভরে কিছুক্ষণ পরপর মুখের সামনে নিয়ে শ্বাস টেনে নেশা করতে দেখা যায় তাদের। এতে মাথা ঝিম ঝিম করে। অর্থাভাবে খেয়ে না খেয়ে তাদের রাত কাটে পথে-ঘাটে।

সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে বছরের বিভিন্ন দিবসগুলোতে এসব শিশুদের নিয়ে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেলেও বছরের বাকি সময় তাদের পাশে কাউকে দেখা যায় না। ফলে অভিভাবকহীন এসব শিশুর পথচলা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোপনে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের। আবার জোর করেও তাদের এসব ক্রিয়াকলাপে নিয়োগ করা হচ্ছে। ড্যান্ডির টাকা জোগার করতে অনেকে আছে ভিক্ষা ও চুরির সঙ্গে জড়িত।

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা; যা তাদের অধিকার। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে ১৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, শিশুদের যে কোনো ধরনের অনাচারের কবল থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। শিশুদের নিরাপত্তা ও বেঁচে থাকার অধিকার জন্মগত। তারপরও এসব শিশুরা থেকে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার বাইরে। ভাগ্য বিড়ম্বিত পথশিশুদের জন্য সরকার ও আন্তর্জাতিক সংগঠন যে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

বরিশালে অভিভাবকহীন, হারিয়ে যাওয়া, এতিম-মিসকিন শিশুদের জন্য শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং সরকারি শিশু পরিবার বালিকা নামে মোট তিনটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে মোট ৪০০ আসন থাকলেও সেখানে মাদকাসক্ত ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক পরিতোষ কুমার কুণ্ড জানান, মাদকাসক্ত শিশুদের মামলা দেওয়া যায় না-এটা আমাদের জন্য একটা প্রতিবন্ধকতা। আবার বরিশালে সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রও নেই যেখানে তাদের চিকিৎসক করা হবে। এ সব শিশুদের চিকিৎসার জন্য সরকারি নিরাময় কেন্দ্র চালু করার আশ্বাস দেন তিনি।

সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক আল মামুন তালুকদার জানান, মাদকাসক্ত ছিন্নমূল শিশুদের জন্য তেমন কিছু করার নেই। কারণ সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় এই ধরনের কোন প্রতিষ্ঠান নেই। তবে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এছাড়া আমাদের শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রেও ব্যাপক আসন সংকট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924