করোনার সময় মা ও শিশুর যত্ন

সব জায়গায় এখন একটাই আলোচনা—করোনাভাইরাস। সবাই সচকিত এই একটি বিষয়ে। সচেতনতাই পারে একে প্রতিরোধ করতে। তাই সব সময়ের মতো শিশু ও মায়েদের প্রতি অবশ্যই যত্নশীল হতে হবে এই সময়েও।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার বলেন, শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কম। বিশেষত ০-৯ বছর বয়সের মধ্যে সংক্রমণ হয় না বললেই চলে। শিশুদের ওপর এর প্রভাব কম হলেও ওদের নিয়ে অসতর্ক হওয়ার সুযোগ নেই। করোনাভাইরাস ছাড়াও অন্য জীবাণুদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এই শিশুদের শরীরে জীবাণু প্রবেশ করলে ওদের মাধ্যমেও সংক্রমিত হতে পারেন পরিবারের অন্যরা। তাই ঝুঁকি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। যদিও ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি খানিকটা কম, তবে যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, তাদের ঝুঁকির মাত্রা বেশি হতে পারে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আফরোজা কুতুবী বলেন, গর্ভাবস্থায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। অন্যান্য ভাইরাসের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণও হতে পারে। গর্ভবতী এবং সদ্য সন্তানের জন্ম দিয়েছেন (বিশেষত ২ সপ্তাহের মধ্যে), এমন মায়েদের বিশেষ সাবধানে থাকা উচিত।

মা ও শিশুর জন্য

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের সাধারণ নিয়মগুলোই বিশেষভাবে মেনে চলার পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া মা ও শিশুর সার্বিক পরিচর্যা তো চলবেই অন্য সময়ের মতো।

● ভিড় এড়িয়ে তো চলতেই হবে মা ও শিশুকে। দোকানপাট, অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলুন। ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো। বাইরে গেলেও সম্ভব হলে লিফট এড়িয়ে চলুন।

● গণপরিবহন এড়িয়ে চলা ভালো। গর্ভবতী মাকে কাজের জন্য বাইরে যেতে হলেও তাঁর জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো। সেটিও ভাড়ায় চালিত বাহন (যা অন্যরাও ভাড়া করতে পারে, যেমন অনলাইনভিত্তিক পরিবহনসেবা) না হয়ে একান্ত নিজের বাহন হলে সবচেয়ে ভালো।

● মা অফিসে গেলেও নিজের ডেস্কেই থাকুন। নিতান্ত প্রয়োজন না পড়লে অনেকের সঙ্গে একই কক্ষে অবস্থান না করা ভালো। বাইরের খাবার না খেয়ে ঘর থেকে ভালোভাবে রান্না করা খাবার নিয়ে বেরোন।

● পরিবারের অন্যরা বাইরে থেকে ফিরেই মা কিংবা শিশুকে স্পর্শ করবেন না, শিশু দৌড়ে এলেও না। যেকোনো সময় মা কিংবা শিশুকে স্পর্শ করতে হলে আগে নিয়মমাফিক সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। না পেলে অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। বাড়িতে ঢুকতেই হাত পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। যিনিই বাইরে যান না কেন, বাইরের জুতা বাইরেই রাখুন। ঘরে ফিরে বাইরের কাপড় ছেড়ে ফেলুন। সম্ভব হলে তখনই সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন এবং নিজেও সাবান দিয়ে গোসল করে নিন।

● শিশু একটু বড় হলে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশি ঢাকা, কফ-থুতু ফেলার নিয়ম শেখান এবং তাকে বারবার মনে করিয়ে দিন। শেখান হাত না ধুয়ে চোখ-নাক-মুখে হাত দেওয়া যাবে না। পরিবারের সবাইকেই এসব নিয়ম মেনে চলতে হবে অবশ্যই।

● ঘরের যেসব স্থান বারবার স্পর্শ করা হয়, তা জীবাণুমুক্ত রাখুন।

● মায়েদের পুষ্টিকর খাবার দিন (আমিষ ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবারও থাকবে সুষম খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে)।

● শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। প্রতিদিন কাপড় বদলে দিন।

● শিশুকে ঠোঁট দিয়ে আদর না করাই ভালো।

● নিয়মমাফিক বুকের দুধ দিন শিশুকে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রথম ৬ মাস মায়ের দুধ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

● মায়ের ডায়াবেটিস, হৃদ্​রোগ প্রভৃতি থাকলে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট জটিলতায় তাঁরাই বেশি পড়েন, যাঁদের বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি অসুখ রয়েছে।

সদ্যোজাত শিশু ও তার মা

পরিবারে নতুন অতিথি এলে তাকে দেখার জন্য উদ্​গ্রীব হয়ে ওঠেন অনেকেই। গর্ভবতীকে দেখতেও ছুটে আসেন অনেকে। তবে এ রকম না করাই ভালো। যেকোনো পরিস্থিতিতেই (করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয় থাক বা না থাক) শিশুকে স্পর্শ করতে চাইলে নিয়মমাফিক হাত ধুয়ে নিন আগে। তবে হাঁচি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট থাকলে মা ও শিশুর কাছে যাবেন না। অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে অবশ্য করোনাসংক্রান্ত বাড়তি কোনো ঝুঁকি নেই মায়ের।

আরও যা

● মা বা শিশুর হাঁচি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। পরিবারের অন্যদের বেলায়ও একই কথা। তবে লক্ষণগুলো দেখা দিলে তাঁরা যেন মা ও শিশুদের থেকে অবশ্যই দূরে থাকেন এবং তাঁদের ৬ ফুটের মধ্যে যাওয়ার প্রয়োজন হলে মাস্ক ব্যবহার করেন।

● মা কিংবা শিশু যদি সংক্রমিত হয়, তাহলে মায়ের কাছে শিশুর থাকা না–থাকা, মায়ের দুধ দেওয়ার বিষয়গুলো সম্পর্কে করণীয় জেনে নিন চিকিৎসকের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924