আরেকবার শিশু হয়ে যাওয়ার দিন আজ
জর্জ বার্নার্ড শ’র একটা জনপ্রিয় উক্তি আছে- We don’t stop playing because we grow old; we grow old because we stop playing (আমরা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে খেলা বন্ধ করি না; খেলা বন্ধ করার কারণেই বৃদ্ধ হই)।
হাসি, খেলা, ঘুম, বিস্ময়, নিখাঁদ সরলতা, কিছু কৌতুহল, সবকিছু সহজভাবে নেওয়া আর খুব অল্পে খুশি হওয়া নিয়েই পুরো পৃথিবীতে সবচেয়ে আনন্দে মেতে থাকে শিশুরা। কয়েকজন শিশু একসঙ্গে হলেই অন্য মাত্রার এক আবহ তৈরি হয়ে যায় চারপাশে। খেয়াল করে দেখবেন, শিশুরা একজন আরেকজনের সঙ্গে অনায়াসে মিশে যায়। খেলাধুলা করে, আপনভাবে, একজনকে দেখতে না পেলে খোঁজ নেয়, জানতে চায়। শিশুদের মধ্যে থাকা এই শিশুসুলভ আচরন দেখতে কিন্তু মন্দ লাগে না। আচ্ছা একটু প্রশ্ন ছুড়ে দেই- শেষ কবে কারও সাথে অনায়াসে মিশেছেন? না চিনতে পেরেও শিশুদের সাথে খেলায় অংশ নিয়েছেন কিংবা কাউকে আপন ভেবেছেন? নিখোঁজ কারও খবরই বা শেষ কবে নিজ থেকে নিয়েছেন?
দিন যত পেরোচ্ছে, করপোরেট মনোভাবের সাথে সাথেই মনে শক্তপোক্ত ধারণা জন্মেছে- নিজেকে খোলা বই করা যাবে না, মোড়কে আবৃত করে রাখতে হবে। বাড়তি হিসেবে প্রতি পাতায় ব্যস্ততা, একঘেয়েমি, কাঠিন্য, ক্লান্তি নামক শব্দগুচ্ছের আধিক্য তো আছেই। যে ব্যস্ততায় ঘুম ভাঙা সকালটা শুরু হয় কর্ম দিয়ে আর অবসান ঘটে বেলা শেষে ক্লান্তি জড়ানো ঘুমে। আর অবসর সময় তো আতশ কাঁচেও খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে ব্যতিক্রমও আছে। কেউ রাত কাটিয়ে দেয় নীল-সাদা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়িয়ে, কেউ মগ ভরা চায়ের সাথে বই নিয়ে আর কেউ হয়তো জীবনের হিসাব-নিকাশ মেলাতেই রাত শেষে ভোর দেখেন। হয়তো সে ভোর নিজের জীবনেও ডেকে আনতে চান। এত ব্যস্ততায় মাঝেমাঝে ভর করে এক আকাশ পরিমাণ হতাশা আর বিষন্নতার মেঘ। মনে হয়, এই তো ছোটোকালেই ভালো ছিলাম। রঙিন ছিল জীবন। অন্তত এত যোগ-বিয়োগে জীবন টেনে নেওয়ার দরকারই ছিল না।
প্রতি বছর ৮ জুলাই বিশ্বজুড়ে নীরবে পালিত হওয়া একটা দিন Be a Kid Again Day (বিং আ কিড অ্যাগেইন ডে)। মানে, আরেকবার শিশু হয়ে যাওয়ার দিন আজ। চলুন না, আবার শৈশবে ফিরে যাই। এর জন্য কোনো টাইমমেশিনের প্রয়োজন হবে না, শুধু আমাদের ভেতরে যে শিশুস্বত্ত্বা আছে সেখানে মনযোগ দিলেই হবে।
বড়ো হতে হতেই আমাদের বাহ্যিক দিকের পরিবর্তনে যোগ হয় ভারীত্ব, পূর্ণতা, জটিলতা এবং পরিপক্কতা। সাথে বিয়োগ হয় আমাদের সরলতা। শৈশবের খোলস পালটে বড়োত্বের খোলসে ঢেকে ফেলি নিজেদের। কিন্তু সময়-অসময়ে টের পাই, মনের খুব গোপনে কোথাও না কোথাও একটুখানি বাচ্চামি রয়েই গেছে। একটু শিশুদের মতো কিছু করতে মন চায়। হয়তো ইচ্ছে হয় প্রাণ খুলে হাসতে, আয়েশ করে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরতে। বন্ধুদের সাথে খেলতে, কিংবা টঙের আড্ডায় খোশমেজাজে শব্দ ছুড়তে। কখনও হয়তো অকারণেই মন চায় দৈনিক মানা রুটিনে একটু অনিয়মের সুর তুলতে।
হয় না ইচ্ছে? এই ইচ্ছে জাগার মানে হলো আপনার মধ্যে এখনও কিছু শিশুসুলভ বিষয় রয়ে গেছে। কী দরকার গম্ভীরতার গভীরে ডুবে থাকার? একটু শিশু হয়ে থাকা যদি নিজেকে আনন্দ দেয়, এতে ক্ষতির কিছু আদৌ কি আছে? জীবনে একটু হাসি যোগ করুন। যত সমস্যাই আসুক, শিশুদের মতো সহজ ভাবে দেখার মানসিকতা আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে।
আমাদের বেঁচে থাকা যদি নিজেদের জন্য হয় তবে ‘পাছে লোকে কী বলবে’ তা ভেবে কেন নিজেদের চিন্তার পরিমাণ বাড়িয়ে হাপিত্যেশ করছি বলুন তো! দিনটি এ কারণেই- যাতে জটিলতার ডেবিট-ক্রেডিট মেলানো মানুষগুলো একটু শিশুদের মতো সহজ হতে চেষ্টা করেন। চারপাশে কিছু মানুষ দেখবেন, যারা জীবনের সবকিছু অঙ্কের মতো জটিল করেন না, তাদের সব সমস্যায় একটা করে সহজ সমাধান থাকে। যেমনটা দেখা যায় শিশুদের ক্ষেত্রে। বিশ্বাস করুন, সহজভাবে জীবনকে দেখতে চাওয়া মোটেও দোষের নয় বরং সুদ-কষা, ঐকিকের নিয়মে জীবনকে আটকালেই জানালা-হীন দমবন্ধ ঘর হয়ে ওঠে।