অনলাইন সেমিনার- বাংলাদেশে শিশুশ্রম : কোভিড-১৯ প্রেক্ষিত

উক্ত সেমিনারটি আয়োজন করেন জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসর। কেন্দ্রীয় আসরের প্রধান পরচিালক এম এ কে শাহিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারটিতে অতিথি হিসেবে ছিলেনড. গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ ও সহ-সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এডভোকেট একেএম বদরুদ্দোজা সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট জাকারিয়া হাবিব পাইলট শিশু সংগঠক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ মারুফ হাসান চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ব্রক ইউনিভার্সিটি, কানাডা। সেমিনারটিতে আলোচকরা বলেন-

বিশ্বে শিশুশ্রমের পরিসংখ্যান?

শতাব্দীর শুরুতে ২০০২ সালে ৫ হতে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের শিশুশ্রমের একটি পরিষংখ্যান-

      কর্মরত শিশু: ৩৫২ মিলিয়ন

      শিশু শ্রমিক: ২৪৬ মিলিয়ন

      ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত: ১৭১ মিলিয়ন

বর্তমানে ৫ হতে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের শিশুশ্রমের একটি পরিসংখ্যান-

      কর্মরত শিশু: ২১৮ মিলিয়ন

      শিশু শ্রমিক: ১৫২ মিলিয়ন

      ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত: ৭৩ মিলিয়ন

বাংলাদেশে শিশুশ্রমের পরিসংখ্যান?

শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলাদেশে ৫ হতে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের শিশুশ্রমের পরিসংখ্যান-

      শিশুশ্রমিক: ৭.৪ মিলিয়ন

      ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত: ১.৩ মিলিয়ন

তথ্যসূত্র: শিশুশ্রম জরিপ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০০৩

 

বর্তমান বাংলাদেশে ৫-১৭ বছর বয়সী শিশুদের শিশুশ্রমের পরিসংখ্যান-

      কর্মরত শিশু: ৩.৪ মিলিয়ন

      শিশুশ্রমিক: ১.৭ মিলিয়ন

      ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত: ১.৩ মিলিয়ন

      অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত: ০.৩ মিলিয়ন

তথ্যসূত্র: শিশুশ্রম জরিপ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০১৩

ঝুঁকিপূর্ণ কাজ কি?

১.      এ্যালুমিনিয়াম ও এ্যালুমিনিয়ামজাত দ্রব্যাদি তৈরী।

২.      অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ।

৩.      ব্যাটারি রি-চার্জিং।

৪.      বিড়ি ও সিগারেট তৈরী।

৫.      ইট বা পাথর ভাঙ্গা।

৬.      ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ।

৭.      কাঁচের সামগ্রী তৈরী।

৮.     ম্যাচ তৈরী।

৯.      প্লাস্টিক ও রাবার সামগ্রী তৈরী।

১০.    লবণ তৈরী।

১১.     সাবান ও ডিটারজেন্ট তৈরী।

১২.    গাড়ি বা মেটাল ফার্নিচার রং করা।

১৩.    চামড়াজাত দ্রব্যাদি তৈরী।

১৪.    ওয়েলডিং বা গ্যাস বার্নার।

১৫.    কাপড়ের রং বা বীচ করা।

১৬.    জাহাজ ভাঙ্গা।

১৭.    চামড়ার জুতা তৈরী।

১৮.    ভলকানাইজিং।

১৯.    লোহাজাত কারখানা।

২০.    চুনপাথরের কাজ।

২১.    এলকোহলজাত দ্রব্যাদি প্রক্রিয়াকরণ।

২২.    তামাক বা কুইবাম তৈরী।

২৩.    কীটনাশক তৈরী।

২৪.    মেটাল কারখানার কাজ।

২৫.    আতশবাজী তৈরী।

২৬.    সোনার দ্রব্যাদি তৈরী।

২৭.    ট্রাক, টেম্পো বা বাসের হেল্পার।

২৮.    স্টেইনলেস স্টীলসামগ্রী তৈরী।

২৯.    ববিন (কাঠ) ফ্যাক্টরীতে কাজ।

৩০.    তাঁতের কাজ।

৩১.    ইলেকট্রিক মেশিনের কাজ।

৩২.    বেকারী কারখানার কাজ।

৩৩.    সিরামিক কারখানার কাজ।

৩৪.    নির্মাণ (রাজমিস্ত্রী) কাজ।

৩৫.    কেমিক্যাল ফ্যাক্টরীতে কাজ।

৩৬.    কামারের কাজ।

৩৭.    বন্দরে এবং জাহাজে মালামাল হ্যান্ডলিং কাজ।

৩৮.    কসাই এর কাজ।

শিশুশ্রমিকদের সুরতহাল?

      ১.১ মিলিয়ন শিশু স্কুলে যায় না।

      ০.৭ মিলিয়ন শিশু মজুরি পায় না।

      ঢাকা শহর কেন্দ্রিক এক জরিপে দেখা যায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে-

      ৫২.২৬ শতাংশ পায়ে আঘাত পায়।

      ৩২.৪৬ শতাংশ চোখে আঘাত পায়।

      ৩১.৫৮ শতাংশ মাথায় আঘাত পায়।

      ২১.৮১ শতাংশ ঘাড়ে আঘাত পায়।

      ২০.১৮ শতাংশের শরীর পুরো বা আংশিক পুড়ে যায়।

      এসব আঘাত প্রাপ্তদের ৮৭ শতাংশের চিকিৎসা পেলেও ১৩ শতাংশ কোনো চিকিৎসা পাইনি।

      ৪১ শতাংশ বাসস্থান বঞ্চিত।

      ৩৫ শতাংশ বিশুদ্ধ খাদ্য বঞ্চিত।

শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থা?

      SDG এর একটি লক্ষমাত্রা হচ্ছে শিশুশ্রম নিরসন। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সকল শিশুশ্রম নিরসন করতে চাই।

      বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮ টি শিশুশ্রম চিহ্নিত করা হয়েছে।

      ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এই সংক্রান্ত ২০৪ টি মামলা হয়েছে।

      ১ম পর্যায়ে ২০০১-২০০৪ সাল পর্যন্ত ১০,০০০ জন, ২য় পর্যায়ে ২০০৫-২০০৯ সাল পর্যন্ত ৩০,০০০ জন, ৩য় পর্যায়ে ২০১০-২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫০,০০০ জন শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হতে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

      ৪র্থ পর্যায়ে ২০১৮-২০২১ সাল পর্যন্ত ১ লক্ষ শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হতে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

      তাদের ৬ মাসব্যাপী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও ৪ মাসব্যাপী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম করা হবে।

      প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রতিটি শিশু মাসিক ১,০০০ টাকা করে এবং প্রশিক্ষণ শেষে ১০,০০০ শিশুকে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষে এককালীন ১৫,০০০ টাকা সহযোগিতা করা হবে।

      সচেতনতার লক্ষে কিছু টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৮-২০১৯, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

      বাংলাদেশে সরকারীভাবে ৪ টি কমিটির মাধ্যমে শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করা হচ্ছে-

১.      ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার ওয়েলফেয়ার কমিটি। এর প্রধান মাননীয় শ্রম প্রতিমন্ত্রী।

২.      বিভাগীয় চাইল্ড লেবার ওয়েলফেয়ার কমিটি। এর প্রধান বিভাগীয় কমিশনার।

৩.      জেলা শিশুশ্রম পরিবীক্ষণ কমিটি। এর প্রধান জেলা প্রশাসক।

৪.      উপজেলা শিশুশ্রম পরিবীক্ষণ কমিটি। এর প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

আইনের গ্রন্থে শিশুশ্রম?

      বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুসহ সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। সংবিধানের ১১, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ এবং ২০ আবার ২৭, ২৮, ২৯, ৩১, ৩৪, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ এবং ৪১ অনুচ্ছেদে নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দেওয়া হয়েছে।

      বেশকিছু দেশী-বিদেশী আইন ও সনদ রয়েছে-

      জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ১৯৮৯

      জাতীয় শিশু আইন ১৯৭৪ ও ২০১৩

      বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও ২০১৮

      জাতীয় শিশুশ্রম নীতি ২০০৮ ও ২০১০

      আইএলও এর বিভিন্ন কনভেনশনসমূহ ইত্যাদি।

      সংশোধিত শ্রম আইন ২০১৮ মতে, ১৪ বছরের নিচে কাউকে কারখানায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

      শ্রম আইন ২০০৬ মতে, কেউ কোনো শিশু বা কিশোরকে কর্মে নিয়োগ দিলে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।

শিশুশ্রমের কারণ?

      দারিদ্রতা বা পরিবারে বয়স্ক শ্রমিক অভিভাবকদের সাথে কাজে যাওয়া।

      পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকা।

      বাবা-মা’র পরিত্যায্যতা বা অবহেলা।

      পিতা-মাতার মধ্যকার সম্পর্কচ্ছেদ।

      প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় বাসস্থান স্থাপন।

      প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকা।

      ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের নেতিবাচক প্রভাবের ব্যাপারে সচেতন না হওয়া।

      শিশুশ্রম বিষয়ক কার্যকরী নীতি, আইন এর অভাব ও তা প্রয়োগের দুর্বলতা।

      অঙ্গীকার ও সামর্থের অভাব সম্বলিত দুর্বল শিশু সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহ।

      শিশুদের দিয়ে কম মজুরীতে কাজ করিয়ে নেওয়া।

শিশুশ্রম নিরসনে করণীয়?

      শিশুদের বিদ্যালয়মূখী করা।

      শিশুদের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাকে আরো বেশী আকর্ষণীয় ও মজাদার করা।

      কারিগরী শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা।

      কার্যকরী ও যুগপোযোগী শিশুশ্রম আইন করা।

      শিশুশ্রম আইন এর কঠোর বাস্তবায়ন।

      শিশুশ্রমের নেতিবাচক বিষয়ে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি।

      শিশুশ্রমের নেতিবাচক বিষয় নিয়ে বিজ্ঞাপন ও টিভি অনুষ্ঠান তৈরী ও প্রচার।

      দেশি ও বিদেশী বিভিন্ন শিশু সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান গুলোর সমন্বয় ও সামর্থ্য বাড়াতে হবে।

      প্রান্তিক পরিবার গুলোর জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

      কর্মজীবি শিশুদের জন্য টেকসই বিকল্প ব্যবস্থা করা।

      সকল মালিক সমিতিকে শিশুশ্রম নিরসনে এক ও সোচ্চার হওয়া দরকার।

      নিয়মিত শিশুশ্রমের জরিপ চালানো এবং স্বল্প বা মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ

আলোচকরা মনে করেন সরকারের সাথে জনগন একসাথে কাজ করলে শিশুশ্রম নিরসন হওয়া সম্ভব

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924