শীতে শিশুর যত্ন

ঝরা পাতাগুলো শীতের গান গাইতে শুরু করেছে। শীতের আমুদে রোদে একদিকে যেমন প্রাণ জুড়িয়ে আসে, অন্যদিকে শুস্ক আবহাওয়া আর ধুলাবালি শরীরের জন্য খানিকটা হলেও বয়ে আনে দুঃসংবাদ। শীতে শিশুরা ত্বক, শ্বাসকষ্টের রোগ নিউমোনিয়া ব্রঙ্কিওলাইটিস হাঁপানিসহ নানা রোগে একটু বেশিই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে দুশ্চিন্তা না করে এই সময়ে সঠিক পরিচর্যা আর একটু বাড়তি যত্ন নিলে আপনার শিশু ভালো থাকবে বৈকি!

শীতে শিশুরা ত্বকসহ সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। শীতল আবহাওয়া, ফ্লু আর রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাসের ব্যাপ্তি এবং ধুলাবালির কারণেই মূলত শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

শুরুতেই সচেতন হন :শিশুদের ঠান্ডা বাতাস এবং ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। যেহেতু শীতে এসব রোগ সংক্রমিত হয়, তাই শিশুদের জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় কম নেওয়াই ভালো। শিশুদের গামছা, রুমাল, তোয়ালে প্রভৃতি আলাদা হওয়া উচিত এবং আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে শিশুদের দূরে রাখা উচিত। শিশুকে স্কুল অথবা বাইরে নিয়ে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করার অভ্যাস করাতে হবে। শিশুর এ ধরনের সমস্যায় লেবু চা, গরম পানিতে গড়গড়া, মধু, তুলসী ও বাসক পাতার রস প্রভৃতি খাওয়ানো যেতে পারে। তবে সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

গরম পানি ব্যবহার :শিশুদের হালকা কুসুম গরম পানি পান ও ব্যবহার করানো উচিত। গোসলে অনেকে স্যাভলন বা নিমপাতা ব্যবহার করে থাকেন। ত্বকের অসুখ না থাকলে এসব বাড়তি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন নেই। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দাঁত ব্রাশ করা, হাত-মুখ ধোয়া, খাওয়াসহ শিশুদের নানা কাজে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করলে এ সময় শিশুরা ঠান্ডাজনিত সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকবে। শীতেও শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। তবে গোসলের সময় শরীরের কাছাকাছি তাপমাত্রার হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। তবে নবজাতক, কফ-কাশিতে আক্রান্ত এবং যারা রোগাক্রান্ত- এমন শিশুর ক্ষেত্রে গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দেওয়া বা স্পঞ্জ করা যেতে পারে। অনেকেই শিশুকে জবজবে করে সরিষার তেল মাখিয়ে গোসল করিয়ে থাকেন। এতে গোসল শেষেও শিশুর চুল ভেজা থাকে এবং ঠান্ডা লাগে। ঠান্ডা বা গরমের সময় সর্বক্ষেত্রে শিশুদের গোসলের পর বুকে-মাথায় তেল না দেওয়াই শ্রেয়। এ ক্ষেত্রে শিশুদের ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা থাকে।

গরম পোশাক পরান :শিশুদের এ সময় গরম পোশাক, মোটা ফ্লানেল বা নেল বা উলের পোশাক পরিয়ে রাখা উচিত। তবে চিকিৎসকের মতে শিশুদের সরাসরি উলের পোশাক পরানো ঠিক নয়। কারণ, উলের ক্ষুদ্র লোমে শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে। সুতি কাপড় পরিয়ে তার ওপর উলের পোশাক পরানো উচিত এবং পোশাকটি যেন নরম কাপড়ের হয়। কারণ খসখসে বা শক্ত কাপড়ে শিশুদের নরম ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, খুব বেশি গরম কাপড় পরালে গরমে ঘেমে শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম থেকে লোমকূপ বন্ধ হয়ে অথবা ইনফেকশন হয়ে ঘামাচি মিলিয়া খোসপাঁচড়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। শিশুদের রাতে ঘুমানোর আগে হালকা ফুলহাতা গেঞ্জি পরিয়ে রাখুন এবং সকালে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও বিকেলের দিকে হালকা শীতের পোশাক পরিয়ে রাখুন।

খাবারদাবার :শীতের সময়ে শিশুদের খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ঘাম অপেক্ষাকৃত কমে হওয়ায় তরল খাবার গ্রহণের প্রবণতাও কমে আসে। এজন্য কিছুটা হলেও স্বাস্থ্যহানি ঘটে। এজন্য শীতের সময়ে অল্প অল্প করে হলেও তাদের ঘন ঘন পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুদের ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে ডিমের কুসুম, সবজির স্যুপ এবং ফলের রস খাওয়ানো উচিত। বিশেষ করে গাজর, টমেটো শিশুদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে পারেন। অনেকের আবার মসুরের ডালে অ্যালার্জি থাকে, সে ক্ষেত্রে মুগের ডাল ব্যবহার করতে পারেন। শিশুরা এ সময় যেন কোনো ধরনের ঠান্ডা খাবার না খায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অ্যালার্জি-
জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

শিশুর ত্বকের যত্ন :শিশুদের ত্বক বড়দের থেকে অনেক বেশি সংবেদনশীল ও নাজুক প্রকৃতির। তাই তাদের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। শিশুর মুখে এবং সারা শরীরে বেবি লোশন, বেবি অয়েল, গ্লিসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করুন। অনেক ক্ষেত্রে লিকুইড প্যারাফিন ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন। অবহেলা এবং হেলাফেলা না করে এ সময় শিশু রোগ ও ত্বকের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাহলে আপনার সোনামণি ভালো ও নিরাপদে থাকবেন।
[চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট চর্ম যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924