শিশু-কিশোরদের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সম্পর্কে শেখানো উচিত কী?

পিতামাতারা শিশুদের উচ্চশিক্ষিত করতে চান। সেজন্য বাসায় ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের পড়াশোনায় ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায়। কিন্তু তরুণদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে কোন বিষয়ে পড়াশোনার প্রস্তুতি নেওয়া দরকার?

টিম এবং কেলি ম্যাকডোনাল্ড তাদের সন্তান জ্যাককে দ্য নলেজ সোসাইটি নামের একটি স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল, জ্যাক যেন স্কুলের প্রথাগত শিক্ষার বাইরের বিষয়গুলো শেখে।

আমার সাধারণ স্কুলে ক্রিপ্টোগ্রাফি বা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সম্পর্কে কোনো কথা হয় না। এটি পাঠ্যসূচিতেও নেই। আমি নিজের আগ্রহ থেকে এক বছর হলো আমি নিজ উদ্যোগে কাজ করছি, বলেন ১৫ বছর বয়েসী জ্যাক। যে নিউ ইয়র্কে তার নলেজ সোসাইটি স্কুলে প্রোগ্রামিং শুরু করেছেন।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের থিঙ্ক ট্যাংক সাম্প্রতিক ‘ভবিষ্যতের স্কুল’ ঘোষণা করেছে। এটি ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়েসীদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দিতে কাজ করছে। সেখানে প্রশিক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অন্যান্য নিশ সব প্রযুক্তির বিষয়গুলোতে। যেসব সাধারণ স্কুলে ধারণা করাও কঠিন।

বাবা-মায়ের চার সন্তাদের মধ্যে একজন জ্যাক। যে নলেজ সোসাইটি স্কুলে ভর্তির আগে একজন নিউরো সার্জন হতে আগ্রহী ছিলেন।

প্রতি সপ্তাহে স্কুলটিতে দুই দিন ক্লাস হয়। তাও প্রতিটি ক্লাস তিন ঘণ্টার। আর স্কুলটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৪০ জন।

তবে ১০ মাসের সেই প্রোগ্রামে খরচ কিন্তু কম নয়। ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এর খরচ ৫ হাজার ৩৯৫ ডলার থেকে ৮ হাজার ২২৫ মার্কিন ডলার। তবে এটি নির্ভর করে কোন শহরে স্কুলটিতে ভর্তি হচ্ছে তার উপর।

বর্তমানে উত্তর আমেরিকার বোস্টন, সিয়াটল, লস অ্যাঞ্জেলস এবং টরন্টো শহরে; ল্যাতিন আমেরিকা ও লন্ডনে স্কুলটি ২০২১ সাল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করবে।

দ্য নলেজ সোসাইটি স্কুলে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৪০টি বিষয়ের উপর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে থ্রিডি প্রিন্টিং, বায়োনিকস, ওয়্যারলেস ইলেক্ট্রিসিটি। এই প্রোগ্রামগুলো অবশ্য তিন বছর ধরে চলবে।

কিন্তু এতো উচ্চাকাঙ্খিত বিষয়গুলো কেনো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে?

কনফারেন্স বোর্ড অফ কানাডার (কানাডার শীর্ষস্থানীয় স্বতন্ত্র গবেষণা সংস্থা) শিক্ষা ও দক্ষতার পরিচালক ম্যাথিউ ম্যাকিন অবশ্য নিশ্চিত নন কেনো এতো উচ্চাকাঙ্খি বিষয়।

তিনি বলেন, তরুণদের নতুন প্রযুক্তি শেখানোর সেই ঝুঁকি নিয়েছেন তারা। যাতে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দক্ষতার জানান দিতে পারে। মানুষের দক্ষতা হলো যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরির অন্যতম উপায়। এটি যেমন টেকসই, তেমনি আবার অন্যদের ভিতর তা তৈরিও করা যায়।

তবে এই দক্ষতার চাহিদা মানুষের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি নাও হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঠিক কতজন মানুষ প্রোগ্রামিং বা ব্লকচেইন এর প্রোগ্রামিং করবে সেটি বলতে পারেন?

তাদের গবেষকরা ভবিষ্যতে শেখার জায়গাগুলো সামাজিক ও আবেগপূর্ণ বা সংবেদনশীলই হবে, টেকনিক্যাল নয় বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, নিয়োগকর্তারা শুধু প্রযুক্তিজ্ঞান দেখেই কর্মী নেবেন না। তারা বরং বেশি দেখবেন দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সম্পর্ক তৈরি ও আবেগীয় সব দক্ষতাগুলো।

এমআইটির প্রভাষক ডেভিড শেরির যিনি অর্থনীতি ও প্রযক্তির সম্পর্ক নিয়ে পুস্তকও রচনা করেছেন, তিনি জানান, এমন সব প্রযুক্তির শিক্ষা শিশু-কিশোরদের মধ্যে জ্ঞানের, জানান তাড়না বাড়িয়ে দেয়। ফলে তারা ভালো কিছু করার জন্য, নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য মুখিয়ে ওঠে। এটা একটা ভালো দিক আমাদের জন্য।

তাই জটিল সব চিন্তা করার জন্য নলেজ সোসাইটি স্কুল অনেক কাজের বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924