শিশুদের সমস্যায় আট জরুরি পরামর্শ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সবাই বাড়িতে থাকছেন। সন্তানদের সঙ্গে গল্প করুন, মজা করুন, গান করুন। তাদের ব্যস্ত রাখুন নানা কাজে, পরিচ্ছন্নতা শেখান। শিশুদের কিছু ছোটখাটো সমস্যা হরহামেশাই হয়। এ ধরনের সমস্যা ও অসুস্থতায় বাড়িতে থাকাই ভালো। ঘরোয়া চিকিৎসায় কাজ না হলে টেলিফোন বা টেলিমেডিসিনে পরামর্শ নিন। খুব জরুরি না হলে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে যাবেন না।

নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া: স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে বা নরমাল স্যালাইনে এক টুকরো তুলা ভিজিয়ে দৈনিক কয়েকবার নাক দুটো পরিষ্কার করে দিন। এতে সমাধান না হলে জাইলোমেটাজলিন/রাইনেক্স (০.০২৫%) নাকের ড্রপ ১ ফোঁটা করে প্রতি নাকে দিলে দ্রুত নাক খুলে যাবে। তবে এটা বারবার ব্যবহার না করাই ভালো। নাক দিয়ে পানি পড়লে পরিষ্কার করে দিন বারবার।

পাতলা পায়খানা: বাড়িতে খাওয়ার স্যালাইন রাখুন। পাতলা পায়খানা হলে প্রতিবার পায়খানার পর স্যালাইন খাওয়াবেন। ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতিবার স্যালাইনের পরিমাণ হবে ৮ থেকে ১০ চামচ, ১ বছরের বেশি শিশুদের দিতে হবে ১০ থেকে ২০ চামচ। বুকের দুধ এবং বাড়িতে তৈরি খাবার আগের মতোই দেবেন। কেনা খাবার, টিনের খাবার, বাসি খাবার, বোতলে করে কোনো খাবার দেবেন না। খেয়াল রাখবেন, শিশুর ঠিকমতো প্রস্রাব হচ্ছে কি না এবং প্রাণচাঞ্চল্য কেমন। যদি প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, শিশু দুর্বল ও অচঞ্চল হয়ে পড়ে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বমি: কোনো কারণে বারবার বমি হলে ডমপেরিডোন সাপোজিটরি (১৫ মি.গ্রা.) অর্ধেক বা একটা পায়ুপথে দিন। যদি বমি বন্ধ না হয়, প্রস্রাব বা চাঞ্চল্য কমে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শিশুকে জোর করে খাওয়ানোর দরকার নেই।

অবিরাম কান্না: অনেক ছোট শিশু এমন অবিরাম কান্না করতে থাকে যে ভয় পাইয়ে দেয়। তার মাথার দিকটা খাড়া করে কোলে নিয়ে হাঁটুন, ঘরের ভেতরে বদ্ধ পরিবেশে থাকলে বারান্দায় নিয়ে আসুন। পায়খানা করেছে কি না, পেট ফাঁপা খেয়াল করুন। কান দেখুন পুঁজ কিংবা সংক্রমণ আছে কি না। কান্না না থামলে সাইমেথিকন/ফ্লাকল ড্রপ ১০ থেকে ১৫ ফোঁটা খাইয়ে অপেক্ষা করুন। বারবার লক্ষ করুন। সমস্যা বেগতিক মনে হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

জ্বর হলে হালকা গরম পানিতে গামছা ভিজিয়ে মাথাসহ পুরো শরীর মুছে দিন।

পায়খানা না হওয়া: কোষ্ঠকাঠিন্য হলে শিশুরা পেটব্যথায় কষ্ট পায়। দু-তিন দিন ধরে মলত্যাগ না করলে গ্লিসারিন সাপোজিটরি (ছোটদের সাইজ) একটা পায়ুপথে ঢুকিয়ে ধরে রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর ১ থেকে ২ চামচ পানি বা শরবত খাওয়ান। মাংস, ভাজাপোড়া খাবার কমিয়ে সবজি-ফলমূল দিতে চেষ্টা করুন।

শরীরে র‍্যাশ, চুলকানি: গরমে অনেক শিশুর ত্বকে র‍্যাশ ও চুলকানি হয়। হালকা গরম পানিতে গামছা ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দিন। এতে না কমলে সিরাপ হাইড্রক্সিজিন/ আরটিকা আধা চামচ দৈনিক দুবার খাবে। ২ থেকে ৩ দিন এভাবে খাওয়ান।

কাশি: হালকা গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস, অল্প চিনি আর কয়েকটা চায়ের পাতা মিশিয়ে ১ থেকে ২ চামচ করে শিশুকে খাওয়ান। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন কমলালেবুর রস দিলে ভালো।

জ্বর: এ সময় শিশুদের সাধারণ জ্বরও হচ্ছে। জ্বর হলে হালকা গরম পানিতে গামছা ভিজিয়ে মাথাসহ পুরো শরীর মুছে দিন। সিরাপ প্যারাসিটামল ড্রপ (৪ থেকে ৮ মাস বা তার কম বয়সী হলে ১ মিলি, ৯ থেকে ১২ মাস হলে ১.৫ মিলি, ১ থেকে ৩ বছর বয়সীদের দেড় চামচ) খাইয়ে দিন। বেশি বেশি পানি, শরবত, ডাবের পানি, খাওয়ার স্যালাইন ইত্যাদি দিন। জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে ট্যাবলেট ডায়াজিপাম (৫ মিলিগ্রাম) অর্ধেক বড়ি দৈনিক ২ থেকে ৩ বার প্যারাসিটামলের সঙ্গে দেবেন।

শিশু বিশেষজ্ঞ, বারডেম হাসপাতাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924