ভয়ানক পর্যায়ে শিশুদের ডিভাইস আসক্তি

শিশুদের খেলার প্রধান মাধ্যম এখন মোবাইল এবং মোবাইল/ট্যাবের গেম। বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসে ডিজিটাল গেমে শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয়ে কোনো ক্লান্তি নেই। অভিভাবকদের চাপে কিংবা চোখ রাঙানিতে কেবল গেমস থেকে মুখ তুলতে বাধ্য হয় তারা।

রাজধানীর একটি নামকরা স্কুলের শিক্ষার্থী তাজওয়ার। তার হাত থেকে কোনোভাবেই ফোন নেওয়া যায় না। বছরখানেক আগে চোখে উঠেছে চশমা। চিকিৎসক বলেছেন, মোবাইল ফোন বেশি দেখা যাবে না। কিন্তু সে কথার তোয়াক্কা নেই তাজওয়ারের। বাবা তৌহিদ ফেরদৌস বলেন, ছেলের মোবাইল আসক্তির কারণে অনেক বকেছি, বুঝিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাছাড়া স্কুলগুলোও একটি করে গ্রুপ তৈরি করেছে হোয়াটঅ্যাপস নম্বরে, সেখানে শিক্ষকরা বিভিন্ন পড়ালেখা বিষয় জানিয়ে দেন। পরীক্ষার রুটিন জানিয়ে দেয়—এ ধরনের বিভিন্ন মোবাইলভিত্তিক লেখাপড়ার কারণে ফোনটা যে একেবারে বাদ দিয়ে দেব, তা-ও পারি না।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য মতে, দেশের ৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৬০ লাখ শিশু-কিশোর ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্তির কারণে নানা জটিলতায় ভুগছে। শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যায় ভুগছে তারা। পর্যাপ্ত খোলা জায়গা না থাকা এবং খেলার মাঠ না থাকার কারণে ডিভাইস আসক্তি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের শতকরা ৯০ ভাগ পরিবারে এখন শিশুদের খেলনার তালিকায় প্রথমেই রয়েছে মোবাইল ফোন, সেটা অবুঝ শিশুদের জন্যে খেলনা মোবাইল আর বুঝমান শিশুদের জন্যে অ্যানড্রয়েট মোবাইল। শিশুর বায়না পূরণে মোবাইলে গেমস দেখা বা গান শোনা যেন এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ফলে মোবাইল ফোনের বিকিরণের কারণে শিশুর চোখে ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আগে শিশুদের গল্প শুনিয়ে খাবার খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো হতো। কিন্তু আজকাল সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে মোবাইল ফোনে কিংবা টিভি। ফলে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসে অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশুরা।

ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, বিশ্বে প্রতি তিন জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর এক জন শিশু। প্রতিদিন ১ লাখ ৭৫ হাজার অর্থাৎ প্রতি আধা সেকেন্ডে এক জন শিশু নতুন করে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ২৫ শতাংশের বয়সই ১০ বছরের কম। ফেসবুকসহ সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ার ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারীর বয়সই ১৮ থেকে ২৯-এর মধ্যে। বাংলাদেশেও ইন্টারনেট প্রসারের মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী, যাতে রয়েছে শিশুরাও। বিটিআরসির ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যার বড় একটা অংশই যুক্ত থাকে নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে।

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আনিসুর রহমান আনজুম বলেন, চোখের জ্বালাপোড়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ পিটপিট করা, চোখ দিয়ে পানি পড়া এসব অভিযোগই বেশি শিশুদের। তিনি বলেন, এটা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শিশুদের চোখের মাইনাস পাওয়ার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। যাকে বলে মায়োপিয়া। এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা কাছের জিনিস ভালো দেখলেও দূরের জিনিস দেখতে পায় না। এ সমস্যা বাড়লে দূরের বস্তু আর দেখবেই না। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, একটানা কম্পিউটার, মোবাইল বা যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তাকিয়ে থাকাটা বড় ছোট সবার চোখের জন্যই ক্ষতিকর। ছোটদের বেলায় সেটা আরও বেশি বিপজ্জনক। অভিভাবকদের অনেকে ভাবেন, শিশুদের চোখের সমস্যা বোধহয় কম হয়। এই ধারণা থেকে তারা ওদের চোখ পরীক্ষাও করান না। এসব শিশুর জন্য তখন সমস্যাটা আরও প্রকট হয়। তিনি জানান, গত কয়েক মাস ধরে শিশুরা চোখ আর মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে বেশি আসছে এবং তাদের চশমার প্রয়োজন হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924