বিপজ্জনক বিনোদন

বিশ্বব্যবস্থার যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্ময়কর আবিষ্কার মুঠোফোন। তারবিহীন এই মাধ্যম যোগাযোগ ক্ষেত্রে এত দ্রুতগতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে যে, যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষেত্রে এর আগে দ্বিতীয় কেউ তা অর্জন করতে পারেনি। ১৯৭৩ সালে প্রথম ডিজাইন এবং পরবর্তীকালে একে বিশ্ববাজারে বাণিজ্যিকভাবে সরবরবাহ করা হয় ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ খুবই অল্প সময়ে জন্মযাত্রা মুঠোফোনের। এই অল্প সময়ের ব্যবধানে মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাত বিলিয়নে। মুঠোফোন আজ আসক্তির তালিকায় সর্বশীর্ষে। আর একে এত আকর্ষণীয় করে তুলেছে মূলত স্মার্টফোন প্রযুক্তি; যাতে যুক্ত আছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা। বর্তমান সময়ে এই স্মার্টফোন প্রযুক্তি প্রায় ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করছে মানুষের মনোজাগতিক মানচিত্র।

এই বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করছে স্মার্টফোন প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত ইন্টারনেট। এটি আবিষ্কারের ফলে এখন বিপণন পণ্যের বাজার, বিজ্ঞাপন সবই এর দখলে; বিনোদন থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন সবটাই আজ এর ভেতর। তবে এর ব্যবহার এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছে যে, একজন মানুষের ঘুম থেকে ওঠা ও রাতে শোবার ঘরে পৌঁছানো পর্যন্ত এটি সরব থাকে।

এই ‘মুঠোফোন-ইন্টারনেট’ সংযোগ আকাশ-প্রকৃতির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে তুলছে বর্তমান মানবমনকে। মুঠোফোনের এক ছোট্ট স্ক্রিনে মাথা নুইয়ে সময় পার করতে করতে মাথার ওপরে যে একখানা বিশাল আকাশ আছে, সেটাই দেখা হয়ে উঠছে না এই সময়ে। রেডিয়েশন তাণ্ডবে এখনকার শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করতে হচ্ছে চশমা। নিজের জীবনকে এক ছোট্ট স্ক্রিনে বন্দি রেখে তার নিজের জন্য যে বিশাল সৃষ্টি জগৎ তৈরি হয়েছে, সেটাই ভুলতে বসেছে। এই মাধ্যমের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনাও। কারণ পথচারী ও চালক উভয়েই রাস্তায় ক্রিয়াশীল থাকা অবস্থায় কখনও কখনও এতে বুঁদ হয়ে পড়ছেন। ফলাফল ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনা।

টানাপড়েন বাড়ছে সামাজিক সম্পর্ক ও মানসিক মানচিত্রে। এই প্রযুক্তির কারণে এখনকার শিশুদের শৈশব মোবাইল গেমে আটকে গেছে। অথচ আগে একখানা ছোট্ট মাঠে শিশুরা খেলাধুলা করত। কখনও জায়গা সংকুলান না হলে একদল খেলত, আরেক দল অপেক্ষা করত কিংবা দর্শক হয়ে খেলা উপভোগ করত। তাদের শেষ হলে অপেক্ষমাণরা নেমে পড়ত। এতে একদিকে যেমন তাদের মাঝে সহনশীলতা তৈরি হতো, অন্যদিকে হয়ে উঠত একে অন্যের সম্পর্কে জানাজানি। যার ফলে সামাজিক সম্পর্কগুলো টিকে যেত। কিন্তু বর্তমান সময়ের তরুণরা স্মার্টনেস কিংবা জগৎ বলতে স্মার্টফোনকে বোঝে। এর বাইরের জগৎ সম্পর্কে তাদের যাত্রা প্রায় নিরুদ্দেশ মন্থর।

বিশ্বায়নের এই যুগে একজন মানুষ কিংবা কোনো সমাজ-রাষ্ট্রকে প্রযুক্তিহীন অবস্থায় কল্পনা করা নিরর্থক। কারণ সময়ের সঙ্গে নিজেকে খুঁজে পাওয়াটাও একটা বড় স্মার্টনেস ও চ্যালেঞ্জ। সেই মোকাবিলায় এই প্রযুক্তির প্রতি প্রেম নিবেদন আবশ্যক। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাংলা ভাষার একটা চমৎকার শব্দ ‘পরিমিত’কে সামনে আনে। এই পরিমিতবোধ আমাদের মানসিক উন্মেষের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে! বিশ্বে যেখানে প্রায় ৩৪৭ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, সেখানে এর ব্যবহার না করে আর যাই হোক, গ্লোবাল ভিলেজের অংশ হয়ে ওঠা যাবে না। তাছাড়া এই প্রযুক্তি ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। কাজেই একে নিয়ন্ত্রণ নয় বরং নিয়মের ভেতরে আনাটাই হবে বুদ্ধিদীপ্ত কাজ। আর এই নিয়ম অবশ্যই রাষ্ট্রকেন্দ্রিক নয়, হতে হবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক, পরিবারকেন্দ্রিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924