করোনাকালে শিশুর যত্ন

করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে ঘরে থাকতে হচ্ছে শিশুদের। বড়রা বিভিন্ন কাজে বাইরে যেতে পারলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঘরবন্দি শিশুদের শরীরে ও মনে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। তাই এ সময় শিশুর প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে। শিশুর মনের ওপর যে কোন প্রভাব তার খাদ্যাভাসে পরিবর্তন ঘটায়। তাই এ একঘেয়ে সময়ে পুষ্টিগুণ বজায় রেখে তাকে সুষম খাদ্য দিতে হবে।

শিশুদের স্বভাবতই খাদ্যের প্রতি অনীহা থাকে। আর করোনার এই সময়ে তারা ঘরে থেকে মাঝে মধ্যেই খিটখিটে থাকার কারণে খাবার নিয়ে বেশি ঝামেলা করতে পারে। এ সময়ে শিশুর বাড়তি যত্ন নেয়া প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও পুষ্ঠি গবেষক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে শিশুকে তার পছন্দের খাবারগুলো দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে সেটা অবশ্যই  স্বাস্থ্য সম্মত হতে হবে।’

ডা. লিয়াকত বলেন, ‘পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার দিয়েই মাজাদার রেসিপি তৈরি করে দিতে পারেন। যেমন শিশুরা সাধারণত মাছ, ডিম, দুধ খেতে চায়না। এক্ষেত্রে পুডিং বা তাদের পছন্দের ডেজার্ট তৈরি করে দিন। এছাড়া বিভিন্ন মৌসুমী ফল রোগ প্রতিরোধে খুবই উপকারী। তবে হজমে ব্যাঘাত ঘটায় এমন ফল কাঁঠাল, লিচু এগুলো অতিরিক্ত না খাওয়ানোই ভাল।’

একই সাথে শিশুর সু স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখতে হবে। এ জন্য দরকার সচেতনতা। যেসব শিশু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের অনেকেই লক্ষণ বিহীন ছিল কিংবা মৃদু উপসর্গযুক্ত। কিন্তু তারা এ ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রাখে। তাই শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্যান্য বয়স্ক সদস্য থেকে দূরে রাখতে হবে। এ ছাড়া টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বাসায় চিকিৎসা নিতে হবে।

ডা: লিয়াকত আরো বলেন, ‘শিশু রোগীর জন্য টেলিমেডিসিন বেশি কার্যকর। খুব বেশি জরুরী না হলে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন নেই। পরিবারের কেউ বাইরে গেলে ভাল করে হাত ধুয়ে ও কাপড় পরিবর্তন করেই শিশুর কাছে যেতে দিতে হবে। ঝুঁকিমুক্ত রাখতে শিশুকে ঘরের মধ্যেই রাখতে হবে।’

অনেক সময়ই  শিশুরা ঘরে থাকাটা মানতে চাইবে না। তাই তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। কিন্তু শাসন করবেন না। এতে তার মনের ওপর চাপ বাড়বে। স্কুল কোচিং, মার্কেট বা দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়া  যাবেনা। এর বাইরে করোনা প্রতিরোধে বাড়ীর পরিচ্ছন্নতাও জরুরী। এ জন্য ঘরের মাঝে, আসবাপপত্র সহ সব কিছু পরিস্কার  রাখতে হবে।

ডা: লিয়াকতের মতে শারীরিক পরিচর্যার পাশাপশি  শিশুর মানসিক যত্নও গুরুত্বপুর্ন। তাই শিশুর একঘেয়েমি দূর করতে বাড়িতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিনোদন দেয়ার  চেষ্টা করতে হবে। ছবি আঁকাসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিতে হবে। সব ধরনের স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই যেন তারা আনন্দে থাকে, সেটি খেয়াল  রাখতে হবে। এ সময় তাদের ইতিবাচক ইচ্ছার প্রতি  বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এখন যেহেতু তারা ঘরে থাকছে তাই টিভি, মোবাইল বা যে কোন মিডিয়ার সঙ্গে বেশি সময় কাটাচ্ছে। এ সবে প্রচারিত নানা রকম খবর বা গুজবে তারা মানিসিকভাবে বিভ্রান্ত হতে পারে। এ জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব- এ বিষয়ে শিশুকে আশ্বস্ত করুন। এতে তারা আতঙ্ক থেকে দূরে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Warning: Undefined array key 0 in /home/freevec2/bdchild24.com/wp-content/plugins/cardoza-facebook-like-box/cardoza_facebook_like_box.php on line 924