৯ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার রিকশা চালিয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে বাবা

সাত মাসের অসুস্থ সন্তানকে হাসপাতালে নিতে প্রয়োজন ছিল অ্যাম্বুলেন্সের। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের খরচ যোগানোর টাকা নেই দরিদ্র রিকশাচালক বাবার। আর তাই মেয়েকে নিজের রিকশায় করে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন তিনি। ১১০ কিলোমিটার দূরত্ব পারি দিতে প্রায় ৯ ঘণ্টা রিকশা চালিয়েছেন রিকশাচালক বাবা মো. তারেক ইসলাম।

গতকাল শনিবার এই ঘটনা ঘটে।

আজ রবিবার কথা হয় তারেক ইসলামের। তিনি জানান, তার সাত মাসের শিশু সন্তান জান্নাতের রক্ত আমাশয় হওয়ায় গত ১৩ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভর্তির পরদিনও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এবং আরও খারাপের দিকে যাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে।

তিনি বলেন, ‘পরের কয়েকদিন রংপুর মেডিকেলে নিতে একটা অ্যাম্বুলেন্স যোগারে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা কেবল রংপুরে যেতেই ৩৫০০-৪০০০ টাকা ভাড়া চায়। আমার মতো একজন রিকশা চালকের জন্য এটা অনেক বেশি।’

লকডাউনে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস বন্ধ থাকায় গতকাল শনিবার তারেক ও তার পরিবার সিদ্ধান্ত নেন রিকশায় করেই তিনি তার সন্তানকে রংপুর মেডিকেলে নিয়ে যাবেন।

গতকাল সকাল ৭টার দিকে ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইনের কাছে তার বাসা থেকে তিনি তার ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে রওনা দেন। তবে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় পৌঁছানোর পর তার রিকশাটি নষ্ট হয়ে যায়।

তারেক বলেন, ‘আমাদের কেবলই মনে হচ্ছিল এই পথ বুঝি শেষ হবে না।’ তারপর আরও ৭ কিলোমিটার পথ রিকশার প্যাডেল চালিয়ে তারেক তার গন্তব্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে পৌঁছান।

রিকশায় শিশু সন্তানের সঙ্গে তার স্ত্রী এবং শাশুড়ি ছিলেন।

সারা রাস্তায় মেয়েটার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল, বলেন তারেক।

অবশেষে শনিবার বিকেল ৪টার পর সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেন তিনি।

‘যদি অ্যাম্বুলেন্স নিতাম চিকিৎসার সব টাকা পথেই শেষ হয়ে যেতো। তাহলে মেয়ের চিকিৎসা কীভাবে করতাম?’ বলেন এই অসহায় বাবা।

রংপুর মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছোট্ট জান্নাত। আজ রবিবার মেয়ের অবস্থা কিছুটা ভালো বলে জানান তারেক।

গত ১২ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন তিনি। তাদের আরও দুটো বাচ্চা আছে। সন্তানের অসুস্থতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তার স্ত্রী ও তিনি বলেন তারেক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *