হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ: ধানক্ষেতে ক্রিকেট আনন্দ
শহরের মতন এখন গ্রামেও খেলার মাঠের বড় অভাব। ছেলেমেয়েরা অপেক্ষায় থাকে কখন ধান কাটা হবে!
চাল, পিঠা পায়েশের আশায় নয়; ধান কাটা শেষ হলেই সেই ক্ষেতকে মাঠ বানিয়ে খেলবে তারা।
সুযোগে উপজেলার বিভিন্ন পল্লীতে ধানক্ষেত পরিস্কার করে ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলায় মগ্ন শিশু কিশোররা।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, পল্লী এলাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া তেমন খেলার মাঠ নেই। তবে আমন কাটায় বিভিন্ন ধানক্ষেতেই ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলা খেলছে শিশুরা।
উঁচু জমির চারিদিকে বসতবাড়ি, মিল ফ্যাক্টরি। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে দিন দিন খেলার মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুর পল্লী এলাকা থেকে।
খেলাধুলা করার সুযোগ পাচ্ছে না শিশু-কিশোররা। ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে পর্যাপ্ত বিকাশ ঘটছে না তাদের।
উন্মুক্ত প্রান্তরে বিচরণের সুযোগ না থাকায় শিশুরা সোনালী শৈশবেই জড়িয়ে পড়ছে প্রযুক্তির অতিরিক্ত অপব্যবহারের সঙ্গে। অনেকে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তাই সচেতন মহল থেকে দাবি উঠেছে উপজেলায় পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও উদ্যান গড়ে তোলার।
উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে খেলাধুলা করতে শিশু-কিশোরদের অপেক্ষা করতে হয় ফসল কাটা পর্যন্ত। কৃষকরা ফসল ঘরে নেওয়ার পর ১৫-২০ দিন পড়ে থাকা জমিতে খেলাধুলার ধুম পড়ে যায় শিশু-কিশোরদের। এ সময় ক্রিকেট, ফুটবল ও ভলিবলসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হয়।
কিন্তু মাঠ না থাকায় অধিকাংশ সময় খেলার সুযোগবঞ্চিত শিশু-কিশোররা ঝুঁকে পড়ছে মোবাইল গেমস, ধুমপানসহ মাদকে।
উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামে ধানের জমিতে ক্রিকেট খেলছিল ৬-৮ জন শিশু কিশোর। তার মধ্যে শিশু রাকিব, মামুন, মোরসালিন, সোহেল, রাব্বিসহ আরও কয়েকজন শিশু আপন মনে ক্রিকেট খেলছিল।
সেখানে কথা হয় মাদরাসা শিক্ষার্থী রাব্বি হাসানের (১২) সঙ্গে। তাদের এলাকায় খেলার মাঠ নেই বলে জানায় সে। শীতের আগে ধান কেটে নিলে কেবল কিছুদিন খেলার সুযোগ পায়।
আরেক শিশু মামুন (১৪) জানায়, ধানকাটার পর দুইদিন ধরে পিচ বানিয়েছি। খেলার মাঠ না থাকায় আমরা খেলতে পারি না তাই ধান কাটার অপেক্ষায় থাকি।
অপর শিশু মোরসালিন জানায়, ক্রিকেটসহ খেলার এসব আনন্দ বেশিদিনের জন্য না। কারণ কিছুদিন পর আবার ধান আবাদ শুরু
হবে তখন আর খেলার সুযোগ পাব না।
একই চিত্র দেখা গেল উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নেও। ওই ইউনিয়নের খালিশা বেলপুকুর, ময়দানপুর গ্রামে ধানক্ষেত পরিস্কার করে খেলার আয়োজন করেছে এলাকার তরুণ কিশোররা।
এলাকার তরুণ মুকিম জানান, আমাদের গ্রামে খেলার মাঠ তেমন নেই। তাই ধানকাটার অপেক্ষায় থাকে ক্রিকেটসহ খেলাপ্রেমী তরুণ কিশোররা। ধানকাটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এসব ক্ষেতকে কিছুদিনের জন্য হলেও মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। এটাই আমাদের আনন্দ।
গ্রামের কিশোর সানোয়ার জানায়, খেলাধুলার জায়গা না থাকায় বিকেলে তারা প্রাইভেট পড়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটায়। অনেকে মোবাইল ফোনে গেমস খেলায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। খেলার মাঠ থাকলে তারা সময়টাকে আনন্দময় ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারত।
সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার বলেন, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশসহ অসংক্রামিত রোগ থেকে বাঁচতে খেলাধুলা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া স্কুলগামী শিশুদের জন্য নিজেদের প্রতিষ্ঠানেই খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা এবং তাদের খেলাধুলায় অনুপ্রাণিত করা শিক্ষকদের দায়িত্ব।
সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন পল্লীতে খেলার মাঠের সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ফয়সাল রায়হান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে এখন শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করে। তবে গ্রামগঞ্জে খেলার মাঠের অভাব। আমরা শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে বিভিন্ন গ্রামে খেলার মাঠ তৈরির কথা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি।