সৈয়দপুরে মাস্ক বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থী
করোনাভাইরাস বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে মাস্ক নিয়ে বাজারে বিক্রি করছে শিশু শিক্ষার্থী। তা থেকে যে আয় হচ্ছে তা দিয়েই চলছে পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরন পোষণ। নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের শহীদ তুলশীরাম সড়কে সোমবার এই চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় মাস্ক বিক্রেতা শিশু হিমু আক্তারের সঙ্গে। সে জানায়, তার বাড়ি শহরের নয়াবাজার এলাকায়। বাবা মুন্না পেশায় রং মিস্ত্রি। বাবার আয়ে দিন আনে দিন খায় অবস্থায় চলে তাদের সংসার। বিগত কয়েকদিন যাবত করোনার প্রভাবে দেশব্যাপী সব কার্যক্রম স্থগিত করায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে তার বাবা। এতে চরম বিপাকে পড়েছে পুরো পরিবার। সারাদিনে একমুঠো খাবারের জন্য দিশেহারা সবাই। এ অবস্থায় হিমু স্থানীয়ভাবে তৈরি মাস্ক নিয়ে বিক্রি করছে।
হিমু জানায়, সে শহরের নতুন বাবুপাড়া বি-জামান লেন এ অবস্থিত ওব্যাট স্কুলের ছাত্রী। এ সময় তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাবাও কর্মহীন। তাই সংসারের ব্যয় নির্বাহের জন্য একটা উপায় করতে গিয়েই মাস্ক ব্যবসা শুরু করেছে। পথচারীরা কিনছে প্রয়োজনীয় এ পণ্যটি। প্রতিটি মাস্ক ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা মূল্যে বিক্রি করছে হিমু। এতে প্রতিদিন তার দেড় থেকে ২০০ টাকা লাভ হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে চলছে তাদের পাঁচজনের অভাব অনটনের সংসারের খাদ্য চাহিদা।
হিমু জানায় শুনছি সরকার এ দুর্যোগ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় খাবার সরবারহ করবে খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগণের মাঝে। কিন্তু আজও তার কিছুই পাইনি আমরা। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি থাকা সত্বেও বাইরে বের হয়ে মাস্ক বিক্রি করছি।
পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এরশাদ হোসেন পাপ্পু বলেন, ইনশা-আল্লাহ, আজকের মধ্যেই ওই হিমুর বাড়িতে খাদ্য সরবরাহ করা হবে। আমার ওয়ার্ডে খেটে খাওয়া মানুষের সহযোগিতার জন্য পৌর পরিষদ ও আমি কাউন্সিলর হিসেবে এ দুর্যোগে সব সময় পাশে থাকবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ জানান, উপজেলার হতদরিদ্র মানুষের তালিকা করা হচ্ছে। এর একটি পৌরসভা কর্তৃক। অন্যটি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে। পৌরসভা যদি ওই শিশুটির পরিবারকে তালিকাভুক্ত না করে তাহলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকাভুক্ত করে সাহায্য দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, সৈয়দপুর পৌরসভার জনসংখ্যা হিসেবে বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। এটি একটি শ্রমিক অধ্যুষিত শহর। এখানে খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক। তারপরও যে বরাদ্দ পেয়েছি তা যথাযথভাবে বণ্টন করা হবে। সে সঙ্গে পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকেও সংকটাপন্ন ব্যক্তিদের সহযোগিতা করা হবে। কেউ যাতে এই সময়ে খাদ্যাভাবে কষ্ট না পায়। এর মধ্যে চাল, ডাল, আলু, আটা, তেল পৌরবাসীর মাঝে বিতরণ করবে পৌর পরিষদ।
সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতার পাশাপাশি সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠির লোকজনের জন্য প্রচুর ত্রাণ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ থেকে সৈয়দপুর উপজেলার কোনো দরিদ্র মানুষ বাদ যাবেনা। তাই ওই শিশুর পরিবারকে সহযোগিতা করতে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক প্র্রচেষ্টা চালাবে।