শিশু যখন কারও সঙ্গে মেশে না
কেন এমন হয়
অনেক শিশুই আছে অমিশুক। বিভিন্ন বিকাশজনিত সমস্যার কারণে অনেক শিশু অপরের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। আবার বিশেষ কোনো বিকাশজনিত সমস্যা ছাড়াই অনেক শিশু একা থাকতে পছন্দ করে। তখন তার সামাজিক দক্ষতাগুলো কমতে থাকে। এ ধরনের শিশুকে বলে লাজুক শিশু (শাই চিলড্রেন)।
শিশুর মধ্যে যখন কোনো কারণে উদ্বেগ তৈরি হয় বা মা-বাবা-পরিবার যদি খুব কঠোর হয়, তখন অপরের সঙ্গে মিশতে কুণ্ঠাবোধ করে শিশু। এই লাজুক শিশুদের বন্ধুও হয় কম। তারা খেলাধুলা বা শিক্ষাসহায়ক কার্যক্রমে অংশ নেয় না। এ ধরনের শিশুরা নিঃসঙ্গবোধ করে, নিজেকে তুচ্ছ মনে করে। এ ধরনের শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে ওঠার প্রবণতা কম থাকে। বড় কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে তার মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়, বুক ধড়ফড় করে, তোতলাতে থাকে। লাজুক শিশুদের একাংশ কিন্তু পড়ালেখায় ভালো হয়, তবে তারা সাধারণত কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়াতে পারে না।
অনেক সময় বংশগতির কারণে শিশু লাজুক হয়ে বেড়ে ওঠে। বাবা-মায়ের সন্তান বড় করার ধরনও শিশুকে লাজুক করে তোলে। পারিবারিক কাঠামো যদি খুব দুর্বল হয় বা শিশু যদি নিয়মিত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মুখোমুখি হয়, তখনো শিশুর অন্যদের সঙ্গে মিশতে অসুবিধা হয়। লাজুক শিশুকে সামাজিক করে গড়ে তুলতে মা-বাবা, পরিবার ও শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। লাজুক শিশুর জন্য অভিভাবক ও শিক্ষকেরা যে কাজগুলো করতে পারেন, তা হলো:
- শিশুকে লেভেলিং করে ফেলা যাবে না। লেভেলিং মানে ‘ও তো কারও সঙ্গে মিশে না’, ‘ও একদম অসামাজিক’, ‘ও খুব লাজুক’, এ ধরনের কথা শিশুর সামনে বলা যাবে না।
- তার এই মিশতে না পারাকে নিয়ে হাসাহাসি বা তির্যক সমালোচনা করা যাবে না। একটি শিশুকে আরেকটি শিশুর সঙ্গে কোনোভাবেই তুলনা করবেন না।
- তার মনের না বলা কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তার উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কারণগুলো খুঁজে বের করে কমানোর চেষ্টা করতে হবে।
- তার সামনে মা-বাবা নিজেদের আত্মবিশ্বাসী হিসেবে তুলে ধরবেন। শিশু যখন দেখবে, তার মা-বাবা বা শিক্ষকেরা অনেক আত্মবিশ্বাসী, তখন নিজেও সে আত্মবিশ্বাসী হতে শুরু করবে।
- শিশুকে নিয়ে বেশি বেশি করে সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে হবে। প্রথম দিকে সমস্যা হলেও, ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে শিশু।
- শিশুকে তার নিজের পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশ করার সুযোগ দিন। তার সব সিদ্ধান্ত নিজেরা নিয়ে নেবেন না। তাকেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দিন।
- নিজের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করতে শিশুকে উৎসাহিত করুন।
- নতুন নতুন বিষয়ের প্রতি তার আগ্রহ থাকলে সেগুলো করতে উৎসাহিত করুন।
- শিশুর সঙ্গে নিজের জীবনের গল্প করুন। কিন্তু কখনোই সেগুলো বলে শিশুকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করবেন না, যে সে কত তুচ্ছ বা আপনার চাইতে কত দুর্বল।
-
প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।