শিশু কি মিথ্যা বলা শিখছে
‘শোয় নাকি সে মুণ্ডটাকে শিয়র পানে দিয়ে?
হয় না কি হয় সত্যি মিথ্যা চল্ না দেখি গিয়ে!’
সত্য–মিথ্যা যাচাইয়ের এই আকুতি সুকুমার রায়ের ‘অবাক কাণ্ড’ ছড়ায়। তাঁর অনবদ্য কল্পকাব্যে শৈশব থেকে অনেকেই পড়েন কুমড়োপটাশ, হাঁসজারু—এমনি কত মজার চরিত্রের কথা। এসবের বাস্তব অস্তিত্ব নেই, তা-ই বলে কি এগুলোকে ‘মিথ্যা’ বলে চিহ্নিত করা যায়? সত্য, মিথ্যা, বাস্তব, কল্পনা—সব মিলিয়েই তো জীবন।
গল্পগাথা-কল্পকথা
আড়াই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু গল্পগাথার রাজ্যে আনন্দে মত্ত হয়ে নিজেই বানাতে পারে ছোট্ট গল্প। পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চেপে সে রাতের বেলা পরির দেশে বেড়িয়ে এসেছে—এমনটা ভাবতে এবং এমন গল্প সবাইকে শোনাতে সে পছন্দ করে। এই বয়সের জন্য এটা স্বাভাবিক। তবে পাঁচ বছর বয়স পেরোনোর পর এ রকম বলাটা স্বাভাবিক নয়, এ বয়সে এমনটা হলে অভিভাবকদের অবশ্যই তার ভুল চিন্তাগুলোকে শুধরে দিতে হবে। নইলে সে বাস্তব আর কল্পনার মাঝের সীমানাকে চিনতে পারবে না। তাকে বোঝাতে হবে, কল্পনাপ্রসূত এসব চরিত্র বা কাহিনি কেবল সাময়িক আনন্দের জন্য তৈরি করা হয়েছে, এগুলোর কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই।
পরিবেশ থেকে শেখা মিথ্যা
আদরে-ভালোবাসায়
শিশুকে আদরমাখা সময় দিলে, মিষ্টি কথা বললে, ভালোবাসায় গড়ে তুললে ‘মিথ্যা’ নামক বিষবৃক্ষের বীজ কখনোই অঙ্কুরিত হবে না শিশুর মধ্যে। এমনটাই বললেন ফাতেমা ফেরদৌস। শিশু ভুল করতেই পারে। ঠিক-ভুল বুঝিয়ে বলুন। শিশুর সব চাহিদা আপনি পূরণ করতে না-ও সক্ষম হতে পারেন, কিন্তু শিশুমনের ভালোবাসার চাহিদা কখনো অপূর্ণ রাখবেন না। কোনো কিছুর জন্য শিশু জেদ করলে সেটি এনে দিতে আপনার অক্ষমতাটিও তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলুন। শিশুকে সময় দিন। গুণগত সময়, আনন্দমাখা সময় শিশুর জন্য আবশ্যক। অবহেলিত শিশু দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যও মিথ্যা বলতে পারে।
সত্যই সুন্দর—এ বোধ তৈরি করুন ওর ভেতরে। মিথ্যা বলার অভ্যাস যাতে গড়ে না ওঠে, সেদিকে নজর রাখতে হবে ছোট ছোট কর্মকাণ্ড দিয়ে। শিশু কেন মিথ্যা বলছে, সেটি খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ী প্রতিকার করুন, সেভাবেই বোঝান তাকে। কোনো পরিস্থিতিতেই মিথ্যা যে কোনো সমাধান নয়, এটা শেখাতে হবে শিশুকে। শিশু অন্যায় করে ফেললে শাস্তি না দিয়ে ভালোবেসেই বুঝিয়ে বলুন, তার করা কাজের জন্য আপনি কতটা কষ্ট পেয়েছেন। শিশুর সঙ্গে ভয়ের নয়, বরং আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলুন। কোনো কাজ কেন অন্যায়, তা-ও বুঝিয়ে বলুন তার উপযোগী ভাষায়।