শিশুর বিকাশের জন্য সুস্থ বিনোদন চর্চা

একটি শিশুর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন একটি সুন্দর পরিবেশ। পারিবারিক পরিবেশের পাশাপাশি সুন্দর একটি সামাজিক পরিবেশ শিশুকে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। শিশুর শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন সুস্থ বিনোদন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি শিশু সবার সঙ্গে মিশতে শেখে। সামাজিকীকরণের ধাপগুলোর মধ্যে শিশু পরিবারের পরপর সমাজের সঙ্গে মিশতে শিখে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা শিশুর সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিশুর বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হলো সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলা করা। খেলাধুলা ছাড়াও এ সময় শিশুরা গান, নাচ, আবৃত্তি, অঙ্কনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পায়। এতে একটি শিশুর মানসিক পরিপক্বতা বৃদ্ধি পায়। সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে গিয়ে শিশুরা সুস্থ প্রতিযোগিতা শিখে। এছাড়া সহযোগিতার মনোভাবও গড়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে শিশুদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে পুরো ভিন্ন চিত্র। স্মার্টফোনসহ বিভিন্ন রকম কম্পিউটার গেমসে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে শিশুরা। যে বয়সে শিশুরা হাঁটতে শিখে সে বয়সেই তারা স্মার্টফোনে সংস্পর্শে চলে আসছে। এতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ কোনোটাই ঠিকমতো হচ্ছে না। স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি তাদের চিন্তাচেতনার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সামাজিকীকরণের ধাপগুলোর সঙ্গেও তাদের পরিচিতি ঠিকভাবে হচ্ছে না। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে সুস্থ বিনোদন চর্চা থেকেও তারা পিছিয়ে পড়ছে।

স্মার্টফোনে পুরো দুনিয়ায় যেন হাতের মুঠোয়। শিশুরা এখন এমন কিছুর সঙ্গে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে যেটার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার বয়স এখনও হয়নি তাদের। স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে টিকটক করার প্রবণতা। এছাড়া স্কুলসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে তাদের অপসংস্কৃতির চর্চা। একটা সময় শিশুরা দল বেঁধে কবিতা আবৃত্তি করত, দেশাত্মবোধক গান গাইতো সেই জায়গাজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ইংলিশ গান। এতে সুস্থ বিনোদন চর্চা থেকে তারা পিছিয়ে পড়ছে। সৃজনশীল চিন্তাভাবনা থেকেও পিছিয়ে পড়ছে তারা। সুন্দর সাবলীলভাবে বেড়ে উঠতে না পারায় এদের মধ্যে দেখা যায় আগ্রাসী মনোভাব। শিক্ষক, পরিবারের সঙ্গে তাদের সেই শ্রদ্ধা আর স্নেহের জায়গাটা দিন দিন কমে যাচ্ছে। মানসিক বিকাশ সঠিকভাবে না হওয়ায় তাদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা দেখা যাচ্ছে।

শিশুর সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে প্রয়োজন পরিবার আর সমাজের সুন্দর পরিবেশ। শিশুর বেড়ে ওঠার পেছনে পরিবার আর সমাজের রয়েছে অনেক দায়িত্ব। শিশুদের খেলার মাঠের অভাব তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার প্রধান অন্তরায়। শিশুদের খেলাধুলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। এখন অনেক মা-বাবা শিশুদের সঙ্গে ঠিকভাবে মিশে না। শিশুদের পর্যাপ্ত সময় দেয় না, এতে তাদের মধ্যে দূরত্ব লক্ষ করা যায়। শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য মা-বাবার উচিত তাদের সময় দেয়া। বিভিন্ন নিয়মকানুন শেখানো। বড়দের শ্রদ্ধা আর ছোটদের সঙ্গে স্নেহ করতে শেখানো। ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা। খেলার ছলে বিভিন্ন নীতি-নৈতিকতা শেখানো। স্মার্টফোনের আসক্তি দূর করা। স্মার্টফোন এবং বিভিন্ন কম্পিউটার গেমস থেকে তাদের দূরে রাখলে তারা সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে। তাদের সুস্থ বিনোদন চর্চায় আওতায় আনলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সুন্দর হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *