শিশুর পেট ফোলায় পরামর্শ

শিশুর পেট ফুলে গেছে বা পেট ঢোল হয়ে আছে—কখনো এমনটা মনে হতে পারে। কখনো মনে হয়, শিশুর পেট সব সময় ফেঁপে থাকে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন অনেক অভিভাবক।

নানা কারণে শিশুর উদর স্ফীত হতে পারে। শিশুর পেটে পানি জমলে এ রকম হতে পারে। একই সঙ্গে শিশুর শরীরেও পানি জমে। সাধারণত কিডনির জটিলতা, যেমন নেফ্রোটিক সিনড্রোম, অ্যাকিউট নেফ্রাইটিস, মারাত্মক অপুষ্টিজনিত রোগ কোয়াসিয়রকর ইত্যাদি কারণে শিশুর শরীরে পানি আসে। হাত ও পায়ের মতো পেটও ফুলে যায়। আমিষের অভাবে পেটে পানি আসে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসায় প্রায় সবাই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।

যদি মনে হয়, পেটের আকৃতি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অনেক সময় নানা কারণে শিশুর পেটের ভেতরের যকৃৎ বা প্লীহা বড় হতে থাকলে পেট স্ফীত হতে থাকে।

তবে শিশুর ফাঁপা পেট বলতে যে অভিযোগটি মা-বাবা বা অভিভাবকেরা সচরাচর করে থাকেন, তা তেমন গুরুতর কোনো রোগের কারণে হয় না। এক থেকে তিন বছরের শিশুর হাঁটার ভঙ্গিটা এমন থাকে যে পেট সামনের দিকে বেরিয়ে আসে। তা ছাড়া অনেক সময় শিশুর পেটে বেশ গ্যাস উৎপন্ন হয়। সুনির্দিষ্ট খাবার, যেমন গরুর দুধ হজমে গোলমাল বাধাতে পারে। কোনো শিশুর যদি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকে, তাহলে এমনটা হয়। আপাতদৃষ্টে শিশুর খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা, বেড়ে ওঠা ঠিক থাকলে এসবে তেমন মাথা ঘামানোর দরকার নেই। নির্দিষ্ট কোনো খাবার হজমে সমস্যা হলে, তা পরিহার করা যেতে পারে।

আমাদের দেশের শিশুদের প্রায় ৯০ শতাংশ কেঁচো কৃমি ও ৫০ শতাংশ বক্রকৃমিতে আক্রান্ত। এই কৃমির সংক্রমণের প্রধান উপসর্গ হলো পেট ফাঁপা, হজমে গোলমাল ও অপুষ্টি। শিশুরা ঘনঘন জুস, ড্রিঙ্ক ইত্যাদি পান করলেও পেট ফাঁপতে পারে।

তবে এটিও মনে রাখা দরকার যে পেটের মধ্যে কোনো চাকা হওয়ার কারণে শিশুর পেট ফুলে যেতে পারে। যদি মনে হয়, পেটের আকৃতি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অনেক সময় নানা কারণে শিশুর পেটের ভেতরের যকৃৎ বা প্লীহা বড় হতে থাকলে পেট স্ফীত হতে থাকে। বিশেষ ক‌রে থ্যালাসেমিয়া বা রক্তরোগে এ রকম হতে দেখা যায়। তাই শিশুর দেহের বা হাত-পায়ের তুলনায় পেট অতিরিক্ত স্ফীত মনে হলে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *