শিশুর এডিনয়েড সমস্যা বুঝবেন কীভাবে, করণীয়
এডিনয়েড শিশুদের একটি জটিল সমস্যা। সর্দি লাগলে অনেক সময় শিশুর শ্বাস কাটতে কষ্ট হয়। নাক দিয়ে শ্বাস না নিয়ে মুখ দিয়ে নেয়। আবার স্বাভাবিক অবস্থায়ও শিশু অনেক সময় ঘুমানোর সময় হা করে থাকে। শ্বাস দিলে শব্দ হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্যমতে, নাকের পেছন দিকে এডিনয়েড গ্রন্থি থাকে। এটি গঠনগত দিক থেকে অনেকটা টনসিলের মতো। এডিনয়েড বড় হয়ে গেলে বেশ কিছু সমস্যা হয়।
এডিনয়েডের লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে যুগান্তরের পাঠকদের পরামর্শ দিয়েছেন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, এডিনয়েড হলে শিশুর নিন্মোক্ত সমস্যা হতে পারে—
*শিশু মুখ হা করে ঘুমায়। রাতে ঘুমের মধ্যে শব্দ হয় (নাক-ডাকা)। এ সমস্যা বেশিমাত্রায় হলে ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসতে পারে বা কিছু সময়ের জন্য দম বন্ধ থাকতে পারে (অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া)।
* বাচ্চা ঘন ঘন সর্দি-কাশিতে ভুগে এবং একবার সর্দি-কাশি হলে তা সহজে সারতে চায় না।
* সমস্যা গলার পেছন থেকে ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে কানে চলে যায়। ফলে কানব্যথা, কানে ইনফেকশন, কানের পর্দা ফেটে যাওয়া এবং কানের ভেতরে (মধ্য কর্ণে) পানি জমে যাওয়া (গ্লুইয়ার) এ রকম মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।
*ঘন ঘন গলার ইনফেকশন, গলায় খুসখুসে কাশি, গলার স্বর বসে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।
* শরীরের ভেতরে অক্সিজেনের স্বল্পতার জন্য ঘুম ঘুম ভাব, পড়াশোনা এবং স্কুলে অমনোযোগী হওয়া, বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়া, অতিমাত্রায় দুষ্টমি করা বা বিরক্ত করা।
* এমনকি রাতে বিছানায় প্রস্রাব করা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
প্রভাব
এডিনয়েড হলে শিশুর শরীর ও মনোজগতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। শিশুর অমনোযোগী হয়ে পড়ে। অনেক সময় জ্ঞানবুদ্ধিও লোপ পায়।
আরও যেসব সমস্যা হতে পারে—
*যত দিন যেতে থাকে, তত দিন শিশুর বৃদ্ধি কমতে থাকে, শিশু ঠিকমতো বৃদ্ধি পায় না এবং মুখের চেহারায় পরিবর্তন (এডিনয়েড ফেসিস) হতে পারে।
*শিশু বৃদ্ধি মানে শুধু দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং ওজনে নয়— এ বৃদ্ধি হচ্ছে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরও বৃদ্ধি। যে শিশু অসুখের জন্য ওজনে বা দৈর্ঘ্যে বাড়ছে না, ধরে নিতে হবে যে সেই একই কারণের জন্য তার শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও (যেমন- মস্তিষ্ক, কিডনি, ফুসফুস) বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
করণীয়
১. যে শিশুরা ঘন ঘন এডিনয়েডের সমস্যায় ভুগে তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই এ গ্রন্থিটি ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সে সম্পূর্ণ সারে না এবং আরও অনেক বেশি দিন থেকে যায়।
২. সমস্যা কখন আপনা-আপনি চলে যাবে সেই আশায় শিশুকে অনাবশ্যক এ রকম জটিল অবস্থাতে ভোগানো কোনোমতেই কাম্য নয়।
৩. শিশুরা যে এসব উপসর্গে ভুগছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই শরীরের অপূরণীয় ক্ষতি করে দিতে পারে, যা থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক সময়ই সম্ভব না-ও হতে পারে।
৪. অনেকে মনে করেন, এর চিকিৎসা করে কী লাভ; এটা তো কয়েক বছর পর এমনিই চলে যাবে। এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়।
আধুনিক যুগে প্রকৃতির ওপরনির্ভর না করে আমাদের উচিত, শিশুকে যতদূর সম্ভব সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে রাখা।
এডিনয়েড গ্রন্থ বড় হয়ে গেলে লম্বা সময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এতে দেখা হয়, সমস্যা সম্পূর্ণ নিরাময় হচ্ছে কিনা। যদি না হয়, তবে অপারেশনের মাধ্যমে এটি ফেলে দিতে হয়।
একটা অতি ছোট্ট অপারেশন যাতে শিশুকে মাত্র এক রাত হাসপাতালে থাকতে হয়। ব্যথা স্বল্পমাত্রাতে হয় এবং জটিলতা হয় না বললেই চলে।