শিশুর ইন্টারনেট ব্যবহার নজরদারিতে রাখতে হবে
ইন্টারনেট ব্যবহারে সন্তানদের চেয়ে দক্ষতায় পিছিয়ে অভিভাবকেরা। সেই সুযোগে সন্তানেরা মা-বাবাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে।
- শিশুরা ইন্টারনেটে সাইবার বুলিং, যৌন নিপীড়ন, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
- ৩১% শিশু অনলাইনে যৌনতাবিষয়ক বার্তা, ছবি, ভিডিও পেয়েছে।
১৬ বছরের কিশোরীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল সমবয়সী ছেলেটির। অনলাইনে তাদের নিয়মিত কথোপকথন হতো। ছেলেটির জোরাজুরিতে একসময় মেয়েটি তার নগ্ন ছবি ইনবক্সে পাঠিয়ে দেয়। ছেলেটি তার বন্ধুমহলে ছবিটি ছড়িয়ে দেয়। সবার হাসাহাসি আর বিদ্রূপের মুখোমুখি হয়ে মেয়েটি যখন আত্মহত্যার চেষ্টা করে, তখন পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি জানতে পারেন। ওই কিশোরী এখন একজন মনোরোগবিদের চিকিৎসাধীন।
শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের উপকারিতা ও বিপদ নিয়ে দিন দিন বিতর্ক বাড়ছে। ভার্চ্যুয়াল জগতের অপার সম্ভাবনা থাকলেও এর অন্ধকার দিক রয়েছে। অনলাইনে শিশুর সাইবার বুলিং, অনলাইনে যৌন নিপীড়ন, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়া, প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। মনোবিদেরা বলছেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে সন্তানদের চেয়ে দক্ষতায় পিছিয়ে অভিভাবকেরা। সেই সুযোগে সন্তানেরা মা-বাবাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। প্রযুক্তির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা জীবন ‘বিগ ডেটা’ যুগে শিশু-কিশোরীদের ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে রাখা হবে বোকামি। এ জন্য অভিভাবকদের ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। বৈদ্যুতিক ডিভাইসের ‘প্যারেন্টাল গাইডেন্স’ (অভিভাবকদের নির্দেশনা) ব্যবহারবিধি শিখতে হবে।
বাংলাদেশের শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর ইউনিসেফ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়া ১৯ শতাংশ শিশু জানিয়েছে, ইন্টারনেটের অপর প্রান্তের ব্যক্তির কাছ থেকে তারা যৌনতাবিষয়ক অযাচিত বার্তা পেয়েছে। ১২ শতাংশ যৌনতাবিষয়ক ছবি বা ভিডিও পেয়েছে। ৫ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের নগ্ন বা অর্ধনগ্ন ছবি-ভিডিও পাঠানোর জন্য জোরাজুরি করা হয়েছে। ৩২ শতাংশ তাদের চেহারা, পরীক্ষার ফল, ধর্ম নিয়ে সাইবার বুলিংয়ের (অপদস্থ, বিদ্রূপ) মুখোমুখি হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেটের জন্য পর্ন, জুয়া খেলা, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে, এমন সাইট বন্ধ করাসহ যখন যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সরকার নিচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, এই সময়ে টিকে থাকার জন্য ডিজিটাল দুনিয়ার মানবসম্পদ তৈরি ছাড়া উপায় নেই। এখন যে শিশু, তাকে কর্মজীবনে রোবটের সঙ্গে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাই অভিভাবকদেরই সচেতন হবে। সব বৈদ্যুতিক ডিভাইসে ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যায়। কিন্তু দেশের ১ শতাংশ অভিভাবকও বিষয়টি জানেন না।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৬৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮৬ লাখ। বাকিরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই যুগে শিশুদের জন্য ইন্টারনেট শুধু জরুরি নয়, মহাজরুরি। এর মাধ্যমে শিশুরা বিশ্বনাগরিক হওয়ার লড়াইয়ে এক ধাপ এগিয়ে যাবে। ক্ষতিকর দিক এড়িয়ে শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। স্ক্রিনে ৪০ মিনিটের বেশি সময় কাটাতে দেওয়া যাবে না। ভালো ভালো সাইট দেখতে শিশুদের উৎসাহ দিতে হবে।